অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবায়ু হল একধরনের মানসিক ব্যাধি যার ফলে রোগী বারবার অপ্রয়োজনীয় চিন্তা কিংবা অনুভূতির মুখোখুখি হয় কিংবা একই কাজ বারবার করার তাগাদাপ্রাপ্ত হয়। ওসিডি নারী,পুরুষ,শিশু যে কারো হতে পারে।তবে সাধারণত বয়ঃসন্ধি কালীন সময়ে অথবা প্রাপ্তবয়স্ক হবার প্রাক্কালে এই রোগে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
অনেকসময় এই রোগের প্রভাবে জীবনযাপন মারাত্নকভাবে প্রভাবিত হয় তবে সঠিক চিকিৎসা এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
ওসিডি’র লক্ষণ :
ওসিডিতে আক্রান্ত ব্যক্তি একই ধরনের চিন্তা বা কাজ বার বার করতে থাকেন,এমনকি তিনি নিজে না চাইলেও,মনের অজান্তে হলেও করে থাকেন।
Obsession হচ্ছে বারবার অবাঞ্চিত বা অপ্রীতিকর চিন্তা বারবার মনে আসা যা ব্যক্তির মনে উদ্বেগ,অস্বস্তি কিংবা বিতৃষ্ণার সৃষ্টি করে।
Compulsion হচ্ছে এই ধরনের অপ্রীতিকর চিন্তা থেকে সাময়িক মুক্তি পাওয়ার জন্যে ব্যক্তি যেসব কাজ করার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে তাগিদ অনুভব করে থাকেন।
উদাহরণস্বরুপ,চুরি বা ডাকাতির ভয়ে অনেকেই বাসা থেকে বের হবার আগে ঠিকভাবে লক করার পরেও বারবার দরজা- জানালা পরীক্ষা করতে থাকেন।
মহিলারা অনেক সময় গর্ভাবস্থায় কিংবা সন্তান জন্মদানের পর ওসিডিতে আক্রান্ত হন।দেখা যায়,তাঁরা শিশুর খাবার বোতল কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাস বারবার পরীক্ষা করে দেখতে থাকেন।
ওসিডির কারণ
ওসিডি কেন হয় বা কারা এই রোগে আক্রান্ত হন এই ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে কিছু জানা যায়নি।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় পরিবারের কারো ওসিডি থাকার ইতিহাস,মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামক রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি, জীবনের কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা কিংবা নির্দিষ্ট ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ওসিডি আক্রান্ত হলে কখন সাহায্য চাইবেন
ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শ সাহায্য চাইতে কিংবা চিকিৎসা নিতে লজ্জিত এবং বিব্রতবোধ করে থাকেন। অন্যান্য যে কোন রোগের মতই ওসিডিও একটা রোগ এবং তাই এতে লজ্জিত কিংবা বিব্রত বোধ করার কিছু নেই এবং ওসিডি থাকা মানেই আপনি “পাগল” এটা মনে হবার ও কোন কারণ নেই।
দুইভাবে আপনি চিকিৎসা নিতে পারেন
১) সাইকোলজিকাল থেরাপিস্টের খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় থেরাপি নেয়া।
২) অথবা আপনি আপনার জেনারেল ফিজিশিয়ানের সাথে আলাপ করতে পারেন, যিনি আপনার সমস্যা শুনে প্রয়োজনবোধে আপনাকে থেরাপিস্টের কাছে রেফার করবেন।
আপনার পরিবার কিংবা আশেপাশের কেউ ওসিডি আক্রান্ত মনে হলে তার সাথে কথা বলুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের উপদেশ দিন। কারণ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং সাহায্য ছাড়া এই রোগের উপশম হওয়া একপ্রকার অসম্ভব বলা যায়।