শখের বাইক চেপে ইদে বাড়ি যাচ্ছিল তারেক। মহাসড়কে প্রচণ্ড স্পিড তোলার অল্প সময় পরেই ঘটে ট্রাকের সাথে সংঘর্ষজনিত ভয়াবহ এক্সিডেন্ট।শরীরের বিভিন্ন যায়গায় মারাত্মক ক্ষত নিয়ে অজ্ঞান তারেককে কিছু লোকজন নিয়ে আসে নিকটস্থ হস্পিটাল। ডিউটিরত ডাক্তার তারেকের প্রাইমারি চিকিৎসা দিয়ে বলেন তারেকের মাথার আঘাতটা গুরুতর। অপারেশন লাগতে পারে, এটা নিউরোসার্জন এবং এনেস্থিসিয়ার ডাক্তার যেখানে আছে সেরকম বড় হস্পিটালে হয়। এটা বলে ওকে তাড়াতাড়ি অন্য হস্পিটাল রেফার করেন। কিন্তু শেষমেশ ওকে বাঁচানো যায়নি। তারেকের আত্মীয়স্বজন খবর দিয়ে ওনারা এসে এম্বুলেন্স ঠিক করে মহাসড়কের জ্যাম ঠেলে ঢাকা মেডিকেল আনতে আনতে যে সময় লাগে, সে সময় তারেকের ছিলো না।
পলিট্রমা বা একই সাথে শরীরের বিভিন্ন যায়গায় আঘাত, এক্সিডেন্ট পরবর্তী একটি কমন ইঞ্জুরি।এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পেশেন্টকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টারশিয়ারি লেভেল বা মেডিকেল কলেজ হস্পিটালে নিয়ে আসা।প্রপারলি ট্রেইন্ড ডক্টর ওকে যেভাবে ম্যানেজ করবেন সেটার কমন টেকনিক হল সি এ বি সি ডি ই টেকনিক।(C-ABCDE)।
যেটিকে প্রাইমারি সার্ভের সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট পার্ট বলা হয়। এ সার্ভের পর কোন কিছু মিস হল কিনা সেটার জন্য সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি নামে আরো দুটি সার্ভে করা হয়।এখানে প্রাইমারি সার্ভে নিয়ে কিছু বলা হল।
C-ABCDE
সি হল ক্যাটাস্ট্রফিক ব্লিডিং/একটিভ প্রব্লেম।যে সমস্যাটা এক সেকেন্ড দেরি না করে সলভ করা উচিত।হতে পারে শরীরের যেকোন যায়গা থেকে একটিভ ব্লিডিং। যেকোনো মুল্যে সেটা বন্ধ করতে হবে।তা না হলে পেশেন্ট এই মুহূর্তে মারা যাবে।
তারপর এ।এয়ারওয়ে।মুখে বা শ্বঃসনালীতে কিছু আছে কিনা।থাকলে সেটা ক্লিয়ার করতে হবে।তা না হলে পেশেন্ট প্রপারলি অক্সিজেন পাবে না।প্রয়োজনে শাঃসনালীতে টিউব/ইন্টুবেট করা লাগবে।
তারপর বি তে ব্রেথিং।শাঃস নিচ্ছে কিনা।বুক পরীক্ষা করা লাগবে।ফুসফুসের সব যায়গায় বাতাস যাচ্ছে কিনা।
সি তে সার্কুলেসন।অতিরিক্ত ব্লিডিং থেকে শকে আছে কিনা, স্যালাইন বা ব্লাড লাগবে কিনা।
ডি তে ডিসেবিলিটি।সংঘর্ষ থেকে মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়েছে কিনা,এখন জ্ঞানের মাত্রা কেমন,স্পাইনাল কর্ডে কোন ইঞ্জুরি থাকলে সারভাইকাল কলার লাগবে। কোন হাঁড় ভেঙেছে কিনা?কোন কোন যায়গার এক্সরে করা লাগবে?
ই তে এক্সপোজার।শরীরে এখনো কোন ক্ষতিকর জিনিস লেগে আছে কিনা, প্রয়োজনে সমস্ত জামাকাপড় খুলে ফেলতে হবে।
এখন আসুন তারেকের কী হল। তারেককে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেছে। যেটি ব্রেইন ইঞ্জুরি ইন্ডিকেট করে। সাথে অন্যান্য কোন বডি পার্টস ইঞ্জুরড কিনা বা দেখা যাচ্ছে না এরকম কোন ব্লিডিং ও হয়তো ছিলো। প্রাইমারি সেন্টারটি অপ্রতুল হওয়ায় সেখানে তাকে উপর্যুক্ত টেকনিক ফলো করে প্রপার চিকিৎসা দেয়া যায়নি। যার ফলে হয়তো ব্রেইন ইঞ্জুরি সাস্টেন করে এবং এয়ারওয়ে মেনটেইন হয়নি ফলে তারেকের শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে শেষমেশ নিস্তেজ হয়ে যায়।
বাইক এক্সিডেন্ট বা যেকোন ট্রামাটিক ইঞ্জুরির পেশেন্টদেরকে উপর্যুক্ত পদ্ধতি ফলো করে স্ক্রিনিং করা উচিত।ইমার্জেন্সি মেডিসিনের ডাক্তারদের এ ধরনের ট্রেনিং থাকে,যাকে এডভান্স ট্রমা লাইফ সাপোর্ট (ATLS)বলে। ১৯৭৮ সালে এমেরিকান কলেজ অব সার্জন এ পদ্ধতিটি চালু করেন। বাংলাদেশে মেডিসিনের এ সেক্টরটি এখনো অনেক ডেভেলপমেন্টের দাবি রাখে। নিরাপদে এবং সাবধানে পথ চলুন। সবার জন্য শুভকামনা।