মেডিকেল স্টুডেন্টদের জন্য বলছি:কমিউনিকেশন স্কিল। ধর একটা মেডিক্যাল প্রসিডিউর করা হবে একজন রোগীর যার ক্যান্সার চিকিৎসা হয়েছিল ৬ বছর আগে তা ফিরে এসেছে কি না (না এলে বাঁচি, বাবা !)। পদ্ধতি হল, অন্ত্রের ভেতর ক্যামেরা ঢুকিয়ে সেখানে অস্বাভাবিক গ্রোথ আছে কি না দেখা।
রোগী অপারেটিং টেবিলে শুয়ে, একটু অচেতন করার প্রস্তুতি কিন্তু দেখা গেল যে সার্জন প্রসিডিউর করবেন তিনি নিজের পরিচয় দেন নাই। রোগী মনে করলেন যে হয়ত পরে তিনি তা করবেন। কিন্তু তিনি বিস্মিত, দ্রুত হ্যালোও বললেন না তিনি।
রোগী আর ডাক্তার সম্পর্ক কিন্তু অনেক প্রাচীন, চিকিৎসা শাস্ত্রের উদ্ভবের সময় থেকেই। উন্নত ওষুধ, সার্জারি, স্ক্যানের পরও রোগীর ভাল হওয়ার ব্যপারটা শুরু হয় ডাক্তার রোগী আলাপ দিয়ে। তবে এই মৌলিক কৌশল শেখান অবহেলিত হয় ট্রেনিং-এর সময়।
ডাক্তারদের অত্যাবশ্যক স্কিল হল কমিউনিকেশন, রোগীর সাথে আলাপ করা, কথা, ভাব বিনিময়। যেমন: চিকিৎসা ইতিহাস নেয়া, রোগীর বর্তমান আর অতীত অবস্থা ইতিহাস, উপসর্গ থেকে অভ্যাস ইত্যাদি নথিভুক্ত করলে রোগ নির্ণয় ৭০ শতাংশ হয়ে গেল।
হয়ত দেখা গেল, তিন বছর ক্লিনিকাল বছর গুলোতে এত বই এত পড়াশুনা এসব করে তোমরা তোমাদের এই প্রয়োজনীয় হাতিয়ারটি
শান দেয়ার, প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত করার সুযোগ পাওনা, আলাপের কৌশল এই জিনিষটি সম্বন্ধে তেমন জানা হল না।
কমিউনিকেশন ভাল না হলে পরে খারাপ পরিণতি হতে পারে। এটি তাই অতি প্রয়োজনীয় স্কিল। মনে রাখবে, তুমি যদি ডাক্তার হিসাবে কমিউনিকেট না করতে পার তাহলে তুমি ভাল ডাক্তার নও। রোগীর সাথে কমিউনিকেট করতেই হবে। একজন বিদেশি চিকিৎসক লেখক তার বই “What Patients Say, What Doctors Hear”এই বইটিতে এসব নিয়ে অনেক লিখেছেন।
Danielle Ofri | What Patients Say, What Doctors Hear
ক্লিনিকে রোগীর ভিড়, টাইট বাজেট, অনিঃশেষ নথিভুক্তকরণ, প্রচুর কাগজে লেখালেখি, এর পরও এই ব্যাপারটি কম্প্রমাইজ করা যাবে না: পীড়িত রোগীর সাথে কথা বলা, তাকে পরীক্ষা করা।
রোগীর ও দায়িত্ব আছে কমিউনিকেশনে
- কমিউনিকেশন ব্যাপারটি দুমুখি রাস্তা, রোগীকেও ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলাতে সমান আগ্রহী হতে হবে।
- ডাক্তারের সাথে দেখা হওয়ার দিন আগে থেকে নির্ধারিত তাই কী কী ইস্যু নিয়ে কথা বলবেন আগে মনে মনে গুছিয়ে নেয়া ভাল
- কোনটা আগে কোনটা পরে অগ্রাধিকার ঠিক করবেন রোগী
- কী বলতে চান একটু রিহারস করে নিন যাতে সীমিত সময়ে সব মোদ্দা কথা বলতে পারেন
- যদি ডাক্তার আপনাকে একটু বিরত করেন তাহলে বিনীতভাবে সময় নিয়ে প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়ার চেষ্টা করুন
- না বুঝলে বোঝার জন্য আবার জিজ্ঞাসা করুন
প্রথম রোগীটির কথা বলছিলাম ডাক্তার হয়ত ভুলে গেলেন রোগীর সাথে কথা বলা, পরিচয় দেওয়া। তবে রোগী কোলনোস্কোপির আগে এনেস্থেটিক হাতে শিরায় অবেদক ইঞ্জেকশন দেয়ার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পারতেন। কমিউনিকেশনে সহায়তায় রোগী অনেক কিছু করতে পারেন তবে এর দায়িত্ব শুরু ডাক্তার থেকে।
সহজ ‘হ্যালো’ হতে পারে সূচনা, কেন নয়? হাতের স্পর্শ, স্মিত হাসি, কাঁধ ঝাঁকানো, হাত দুটো ঘষে গরম করে রোগীর পেটে হাত চেপে কলিজা প্লীহা উদর পরীক্ষার উষ্ণতা বড় দাওয়াই। রোগী অর্ধেক ভাল হয় আচরণে, ভাব আর কথা বিনিময়ে, বাকি অর্ধেক ওষুধের কেরামতি।