গর্ভাবস্থায় শিশুর পরিপূর্ণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মায়েদের শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে। কিছু সাধারণ শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকলেও বেশিরভাগই আমাদের অজানা, কিংবা মায়েরা যখন হঠাৎ এইসব পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তারা ব্যাপারটাকে সহজভাবে নিতে পারেন না অথবা বিনা কারণেই দুশ্চিন্তা করতে থাকেন। তাহলে আসুন,গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে কী কী পরিবর্তন ঘটে তা জেনে নেয়া যাক:
নাক
গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই আপনি দেখতে পাবেন,আপনার ঘ্রাণ শক্তি আগের চেয়ে বহুগুণে বেড়ে গেছে। বিজ্ঞান বলে,শরীরে রক্ত সঞ্চালিন বেড়ে যাওয়ার কারণে এটা হয়। কিন্তু প্রাচীন প্রবাদ অনুসারে, এটার কারণে মায়েরা শরীরের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা আরো সুদৃঢ় হয়,যাতে করে তারা ক্ষতিকারক পদার্থ থেকে দূরে থাকতে পারেন।
ফুসফুস
গর্ভাবস্থায় সময়ের সাথে সাথে ফুসফুস উপরে ও পিছনে সরে বাচ্চাকে পেটে বাড়তে দিতে সাহায্য করে। একারণে মায়েরা অনেক সময় সামান্য শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে পারেন। মা এবং শিশুর জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে মায়ের নি:শ্বাস-প্রশ্বাসের হার ও বৃদ্ধি পায়।
পাকস্থলী
এই সময় পাকস্থলী কোন কোন খাবারের জন্য প্রচন্ড আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে মস্তিষ্ক কে সিগনাল প্রেরণ করে (Cravings) আবার কোন কোন খাবার একেবারেই সহ্য করতে পারেনা (Aversion)। অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন এই Cravings এবং Aversions যথাক্রমে মায়েদের পর্যাপ্ত পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকর খাদ্যদ্রব্য থেকে মায়েদের দূরে রাখে।
অন্ত্র
গর্ভকালীন সময়ে প্রোজেস্টেরণ নামক হরমোনের প্রভাবে খাদ্যনালীর ভেতর দিয়ে খাদ্য চলাচলের গতি অনেকাংশে কমে যায়,ফলে বুক জ্বালাপোড়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দেখা দেয়। তবে এটার ভালো দিক হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য অনেকক্ষণ ধরে খাদ্যনালীতে থাকায় শরীর খাদ্যের পুষ্টিগুণ ভালোমত শোষণ করে নিতে পারে।
জরায়ু
শিশুর পরিপূর্ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জরায়ুর আকার ও বৃদ্ধি পায়।গর্ভাবস্থার আগে জরায়ু প্রায় একটি কুল বা বরই এর সমান থাকে।কিন্তু প্রেগন্যান্সির ৬ সপ্তাহের মধ্যে তা একটি আপেলের মত বড় হয়। পুরো গর্ভাবস্থায় জরায়ু তার স্বাভাবিক আকারের ৫০০ বা ১০০০ গুণ পর্যন্ত বড় হতে পারে। প্রেগন্যান্সীর শেষ তিন মাসে জরায়ুতে একটি বিশেষ সংকোচন অনুভূত হয় যা Braxton Hicks নামে পরিচিত। ধারণা করা হয়,শিশুর জন্মদানের প্রস্তুতি হিসেবেই এই সংকোচন হয়ে থাকে।
মস্তিষ্ক
গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্তায় মস্তিষ্কের আবেগপূর্ণ অংশগুলো বেশি প্রভাবিত হয়। যার ফলে শিশুর সাথে মায়ের বন্ধন আরো দৃঢ় হয় এবং মা খুব সহজেই শিশুর চাহিদাসমূহ বুঝতে পারেন।
যকৃত
গর্ভস্থ শিশুর বর্জ্যসমূহ নিষ্কাশনের জন্যে যকৃতকে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি কাজ করতে হয়,যার ফলে মাঝে মাঝে যকৃতের আকার সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
সারভিক্স
গর্ভাবস্থার শুরুতে সারভিক্স দৃঢ় থাকে কিন্তু প্রসবকালীন সময়ে শিশুর মাথার চাপ এবং হরমোনের পরিবর্তনের কারণে তা পাতলা হয়ে প্রশস্ত হয়ে প্রসবকে সহজ করে।