বর্তমান সময়ে আমরা প্রায়ই একটা রোগের নাম শুনে থাকি,তা হলো “ডাউন সিনড্রোম” বা Down Syndrome. কী এই রোগ? কী হয় এই রোগে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ডাউন সিনড্রোম কী?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে ডাউন সিনড্রোম হচ্ছে এমন একটা অবস্থা,যেখানে রোগীর অতিরিক্ত একটা ক্রোমোসোম থাকে। ক্রোমোসোম হচ্ছে শরীরে জিনের ছোট একটা “প্যাকেজ” বা “ইউনিট”। গর্ভাবস্থায় এবং জন্মের পর একটি শিশুর শরীর কিভাবে গঠিত হবে এবং কিভাবে কাজ করবে তা ক্রোমোসোম দ্বারা নির্ধারিত হয়। সাধারণত, একটি শিশু ২৩ জোড়া বা ৪৬ টি ক্রোমোজোম নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুর শরীরে এই ক্রোমোসোম সমূহের একটা অতিরিক্ত কপি থাকে, যা ক্রোমোসোম ২১ নামে পরিচিত। এই অতিরিক্ত একটা ক্রোমোসোম থাকাকে মেডিকেলীয় ভাষায় বলা হয় Trisomy, এই কারণে ডাউন সিনড্রোম “Trisomy 21 ” নামেও পরিচিত। এই অতিরিক্ত ক্রোমোসোম শিশুর মস্তিষ্ক ও শরীরের বৃদ্ধিতে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটায়,যার ফলে শিশুটি মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়।
কেন হয় বা কাদের হয়?
কোন শিশুরা ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত করে এটা নিশ্চিতভাবে এখনো জানা যায়নি। তবে কিছু ক্ষেত্রে মায়ের বয়স কিছুটা ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মায়েরা ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সে গর্ভধারণ করেন তাদের ক্ষেত্রে কমবয়সী মায়েদের তুলনায় ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশু জন্ম দেবার ঝুঁকি বেশি থাকে।
লক্ষণসমূহ
ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের আচরণ ও বাহ্যিক আকৃতি প্রায় একই রকম হয়ে থাকলেও,তবে তাদের কার্যক্ষমতা ভিন্ন হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের বুদ্ধিমত্তা ও কথা বলার গতি স্বাভাবিক শিশুদের চেয়ে কিছুটা কম হতে পারে।
শারীরিক বৈশিষ্ট্যসমূহ
ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের নিম্নোক্ত শারীরিক বৈশিষ্ট্যসমূহ দেখা যায় :
১)মুখ বিশেষ করে নাক চ্যাপ্টা থাকা
২) বাদাম আকৃতির তির্যক চোখ
৩)খাটো ঘাড়
৪)কানের আকার ছোট হওয়া
৫)স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হাত-পা
৬)হাতে একটা বিশেষ লাইন থাকা যা Palmar crease নামে পরিচিত।
৭)অপেক্ষাকৃত কম দৃঢ় মাংসপেশী
৮) স্বাভাবিকের চেয়ে কম উচ্চতাসম্পন্ন হওয়া।
ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি পরবর্তীতে কানের সংক্রমণ,শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস, চোখের সমস্যা,হৃদপিন্ডের জন্মগত ত্রুটিসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগতে পারেন। তাই এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চেক-আপ করানো প্রয়োজন হয়।
ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি সারাজীবনই এই অবস্থায় থাকেন।তবে পর্যাপ্ত মনোযোগ,সময় ও সেবা পেলে তাঁরাও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারেন।