পৃথিবীতে ৪২৬ মিলিয়ন লোক ডায়াবেটিস নিয়ে বেঁচে আছেন। ২০১৬ সালে শুধু ডায়েবেটিসে মারা যান ১.৬ মিলিয়ন মানুষ। সেই প্রাচীনকাল থেকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত করছে মানুষকে। আজ পর্যন্ত এর কোন নিরাময় বের হয়নি যদিও অনেক ডায়াবেটিস রোগী রোগকে মোকাবেলা করে লাভ করছেন সুস্থ দীর্ঘ জীবন।
এটি একটি ক্রনিক রোগ। যখন রক্তের গ্লুকোজ খুব বেশি হয়ে যায় আর একে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ করা যায়না তখন হয় ডায়াবেটিস। আমাদের শরীর ব্যবহার করে সুগার অর্থাৎ গ্লুকোজ, এনার্জির প্রধান উৎস হিসাবে। কিন্তু দেহের কোষ গ্লুকোজকে ব্যবহার করতে হলে গ্লুকোজকে কোষের ভেতরে যেতে হয়। একে ঢোকা সহজ করে একটি হরমোন যার নাম ইনসুলিন যা কোষকে সংকেত দেয় গ্লুকোজ কে অন্দরে নেবার জন্য।
ডায়াবেটিস এমন রোগ যখন শরীর তৈরি করে খুব কম ইনসুলিন বা একেবারেই তৈরি করেনা। আবার এমন হয় শরীর ইনসুলিন থাকলেও একে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়।
শরীরে প্যানক্রিয়েজ বা অগ্ন্যাশয় নামে গ্রন্থিতে এক ধরনের বিশেষ কোষ ‘বিটা কোষ ‘ তৈরি করে ইনসুলিন।
রক্তের গ্লুকোজ যখন বেড়ে যায়, সেই বিটা কোষ পায় দ্রুত ইনসুলিন তৈরির সংকেত আর নিঃসরণের জন্য যাতে রক্তের গ্লুকোজ মান ঠিক ঠাক থাকে। হরমোন আর দেহ যন্ত্রের পরস্পর যোগ সাজসে রক্তের গ্লুকোজ মান থাকে স্বাভাবিক। সেই ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল হলে ঘটে ডায়েবেটিসের মত রোগ। রক্তে গ্লুকোজের উচ্চ মান দীর্ঘ সময় থাকা শরীরের জন্য খুব বিপজ্জনক। রক্তনালীতে হয় সমস্যা হয় অন্যান্য জটিলতা যেমন অন্ধত্ব, খুব বেশি প্রস্রাব, হার্ট এটাক, স্নায়ুর ক্ষতি, কিডনি বিকল হওয়ার মত জটিলতা। ঝাপসা হয় দৃষ্টি আর সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা যায় বেড়ে। ডায়েবেটিসের এসব জটিলতা সহজে এড়ানো যায় যদি রোগকে ঠিকমত মোকাবেলা করা হয় ।
আছে তিন রকমের ডায়াবেটিস
টাইপ ১ ডায়েবেটিস
টাইপ ১ ডায়েবেটিসে আমাদের ইমিউন ব্যবস্থার একটি ভ্রান্ত ধারনা হয় যে ইনসুলিন উৎপন্নকারি কোষগুলো হল শরীরের জন্য হুমকি আর তাই এদের আক্রমন করে। এসব বিটা কোষ ধ্বংস হলে শরীরের ইনসুলিন উৎপাদনের সহজাত ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। সেজন্য এদের ইনসুলিন ইঞ্জেকশান নিতে হয় তা না হলে শরীর বাঁচে না। এ ধরনেরর ডায়াবেটিস সাধারনত উত্তরাধিকারে পাওয়া রোগ আর এটি নির্ণয় হয় অল্প বয়সে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস
টাইপ ২ ডায়াবেটিস শরীরে ইনসুলিন তৈরি হলেও শরীর তা ব্যবহার করতে পারেনা আর ইনসুলিন হল গ্লুকোজকে দেহ কোষে প্রবেশের মুল চাবিকাঠি। কারন দেহ কোষ হারায় ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা। রক্তে যদি দীর্ঘ দিন গ্লুকোজ থাকতে থাকে তখন বিটা কোষ ক্ষয়ে যায়, কেন দেহ কোষ ইন্সুলনের প্রতি এমন রেজিসটেনট বা প্রতিরোধী হয়ে উঠা তা স্পষ্ট নয় তবে কিছু উপাদান যে এতে জড়িত তা বিজ্ঞানীরা দেখেছেন: শরীরে বাড়তি ওজন, হাই ক্যালোরি ডায়েট, শরীর চর্চার অভাব, ক্রনিক স্ট্রেস অনেক সময় ঘটায় টাইপ ২ ডায়াবেটিস ।
তৃতীয় ধরনের ডায়াবেটিস
তৃতীয় ধরনের ডায়াবেটিস হল জেসটেশনাল ডায়াবেটিস বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। গর্ভকালে ঘটতে পারে।
মায়ের গর্ভে আরেকজন মানব শিশু বহন মায়ের জন্য চ্যালেঞ্জ। অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল মা আর শিশুর জন্য যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদন। অনেক সময় শরীর সে ব্যবস্থাপনা করতে পারেনা আর এতে একসময় হয় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। এ ধরনের ডায়াবেটিস সাধারণত সন্তান প্রসবের পর চলে যায় তবে গর্ভকালে ঠিক মত মোকাবেলা না করলে হতে পারে জটিলতা।
সম্প্রতি নিস্ক্রিয় জীবন যাপন আর অস্বাস্থ্যকর খাওয়া আমদের জীবনে প্রবেশ করেছে। এই কারনেই পৃথিবী এখন এত ডায়াবেটিস রোগী আর ক্রমে তা বাড়ছে। আর তা তরুণদের মধ্যে।
যাদের ওজন বেশি এদের চর্বি জমছে যকৃতে আর অগ্ন্যাশয়ে যাতে ডায়েবেটিস ২ বাড়ে। তাই জীবন শৈলীতে পরিবর্তন এনে বা খুব বেশি ফ্যাট হলে সার্জারি করে সুফল পাওয়া সম্ভব। এর নিরাময় না হলেও আছে আশা। একটি সম্ভাব্য সমাধান নিহিত স্টেম সেল রিসার্চে। এরা হল বিশেষ কোষ যা গজাতে পারে নানা রকমের কোষ এমনকি বিটা কোষ। ল্যাবরেটরিতে বিটা কোষ জন্মাতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে অসুস্থ বিটা কোষ সুস্থ করা কঠিন। টাইপ ১-এর ক্ষেত্রে ইমিউন ব্যবস্থা আক্রমন করে বিটা কোষকে। বিভিন্ন ট্র্যান্সপ্ল্যানটেশন পদ্ধতির চেষ্টা করতে হবে। সে পর্যন্ত আমাদের কাজ স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা।