ইদের ছুটিতে বাবা মার সাথে গ্রামে বেড়াতে এসেছে ৫ বছরের রাহাত। খুব দুর্দান্ত আর অস্থির স্বভাব। বিশাল বাড়ি,সাথে পুকুর। ইদের আগের দিন দুপুরে সবার সাথে পুকুরে ঝাপঝাপি করতে এসে হঠাৎ করে চিৎকার চেঁচামেচি! রাহাতকে পাওয়া যাচ্ছে না, যে যার মত পানিতে লাফাচ্ছে কখন রাহাত নেমেছিলো কেউ খেয়াল করেনি। ঘাটের সবাই ব্যাপারটা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিল, তারপর রাহাতকে পানির নীচে খুঁজে পেতে ২ মিনিত, আর কাছের হসপিটালের ইমারজেন্সিতে আনতে ১৫ মিনিট। যা হবার এই ১৫-২০ মিনিতেই শেষ। ইমারজেন্সিতে থাকা ডাক্তার সিপিআর দিলেন ৫ মিনিট কিন্তু শেষমেশ রাহাতকে বাঁচানো যায়নি।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় এ চিত্র খুব একটা আনকমন না। এ দেশের বেশিরভাগ ডাক্তারই লাইফ সেভিং ইমারজেন্সিতে কিংবা বেসিক লাইফ সাপোর্টের বিষয়গুলোতে প্রপারলি ট্রেইন্ড না, সাধারণ মানুষত দূরের কথা। উন্নত দেশগুলোর চিত্র ভিন্ন। সিপিআর কিংবা কাছাকাছি কিছু লাইফ সেভিং সিচুয়েশনে বেসিক রেস্পন্স কি হওয়া উচিত সেটা একজন ট্রাক ড্রাইভার থেকে শুরু করে বেলে ড্যান্সার সবাই জানে।
আসুন এবার রাহাতের ক্ষেত্রে কি করণীয় ছিল। মনে করুন আপনার কিছু বেসিক আইডিয়া আছে, আপনি জানেন এ বাচ্চাটিকে কাছের হসপিটালে নিতে নিতে সে মারা যাবে বা ততক্ষণে তার ব্রেইনে পার্মানেন্ট ক্ষতি হয়ে যাবে কারণ অক্সিজেন ছাড়া মানুষের ব্রেইনে পার্মানেন্ট ক্ষতি হতে শুরু করে অন এভারেজ ৪ মিনিট থেকে। সুতরাং এভ্রি সেকেন্ডস কাউন্টস। পানি থেকে উঠানোর পর পরই যখন দেখলেন সে অজ্ঞান, পালস নাই, সাথে সাথে আপনি রাহাতকে মাটিতে লম্বা করে শোয়ায়ে দিবেন, কপালে বাম হাত রেখে ডান হাতের মধ্যমা আর তর্জনী দিয়ে থুতনি বা চিন উঁচিয়ে ধরে একই সাথে নাক বন্ধ করে আপনার মুখ দিয়ে বাচ্চাটির মুখে ফুঁ দিবেন, দিয়ে দেখবেন পেট ফুলে কিনা আর ফুঁ বন্ধ করার পর আবার ফুলা কমে গেল কিনা।এভাবে ৫ বার। এর নাম রেস্কিউ ব্রেথ।
রেস্কিউ ব্রেথ দেয়ার পর যদি জ্ঞান না ফেরে সাথে সাথে সিপিআর স্টার্ট করবেন।
বড়দের রেস্কিউ ব্রেথ লাগে না। বয়সভেদে সিপিআরের নিয়ম খুব বেশি ডিফ্রেন্ট না, মিনিটে ১০০-১২০ বার রেটে বুকের মাঝখানে ৫ সেন্টিমিটার গভীরতায় ১৫ বার (বড় দের ক্ষেত্রে ৩০ বার) চাপ দিবেন। তারপর প্রথমবারের মত মুখে ফুঁ দিবেন ২ বার। এভাবে চলবে যতক্ষণ না বাচ্চাটির জ্ঞান ফিরে আসছে অথবা এডভান্সড কোন হেল্পটিম আসছে।
একই সাথে ২মিনিট পর পর পালস চেক করার কথা এবং জ্ঞান ফিরার পর কিংবা না ফিরলেও বাম কাত করে রিকভারি পজিশনে রাখার কথাও মনে রাখতে হবে।
এটাও অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে বুকে চাপ দেয়া মানেই সিপিআর না
ইফেক্টিভ সিপিআর মানে আপনাকে উপরে বর্ণিত টেকনিক ফলো করতে হবে এবং কিছু বেসিক ট্রেনিং থাকা লাগবেই। কারণ আপনার এই অল্প কিছু স্কিল এবং টাইম ম্যানেজমেন্ট এই বাচ্চাটির জীবন মৃত্যুর ব্যাপার। এই অল্প কিছু সেকেন্ডই হয়ত ওর শেষ মুহূর্ত।
হুট করে কেউ অজ্ঞান হয় না। যে কেউ কার্ডিয়াক এরেস্ট কিংবা কলাপ্সের আগে আপনাকে কিছু সাইন দিবে। প্রপারলি ট্রেইন্ড হেলথ কেয়ারার সেটা অবশ্যই খেয়াল করবে এবং প্রিভেনশনের যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। বিভিন্ন কারণের মাঝে অক্সিজেনের অভাব এবং এর সাপোর্টের কথা বলা হয়েছে এখানে।অজ্ঞান হওয়া মানেই আবার বেসিক লাইফ সাপোর্টের কিংবা সি পি আরের ইন্ডিকেশন না।এখানে যে সেটআপের এবং প্রসিডিউর বলা হয়েছে এর নাম বেসিক লাইফ সাপোর্ট। হসপিটাল সেটআপে যেখানে পেশেন্টকে বেসিকের পাশাপাশি ইন্সট্রুমেন্ট সাপোর্টে রিভাইব করার চেষ্টা করা হয় সেটার না এডভান্স লাইফ সাপোর্ট।
বাংলাদেশের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড মেডিকেল এরিয়া হচ্ছে ইমারজেন্সি মেডিসিন। উপরে বর্ণিত সিনারিতে ইমারজেন্সি মেডিসিনের খুব ছোট কিন্তু মোস্ট ইম্পরট্যান্ট একটি টপিক নিয়ে বলা হয়েছে।যদিও এর কাভারেজ অনেক বড়। মেডিকেল কলেজ, ইউনিভার্সিটি তে নতুন নতুন কোর্স এড হচ্ছে বছর বছর কিন্তু এ সাবজেক্টে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বের হবার কোর্স চালু হচ্ছে না। কিছু ভালো মানের হসপিটাল তাদের ইমারজেন্সি ডিপার্টমেন্টে এনেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রাখতে শুরু করেছে।একিউট আর ইমারজেন্সি মেডিসিন এবং বেসিকের সাথে এডভান্স লাইফ সাপোর্ট সহ অন্যান্য কিছু লাইফ সেভিং প্রসিডিউর এ সাবজেক্টের ট্রেনিং পিরিয়ডে থাকায় কিছু হসপিটাল এটা শুরু করেছে। সব ধরনের ডাক্তারতো অবশ্যই, দেশের সব নাগরিকেরই বেসিক লাইফ সাপোর্টের ট্রেনিং থাকা উচিত।এটা হয়ত আপনার কাছের কারো অমূল্য জীবন বাঁচাতে কাজে লেগে যেতে পারে।