মাল্টিপল মায়েলোমা (Multiple myeloma) হলো এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার। প্লাজমা সেল, রক্তের এক ধরনের শ্বেত কণিকা যা জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে সেই প্লাজমা সেল অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়লে হয় এমন ক্যান্সার।
প্লাজমা সেল রয়েছে অস্থি মজ্জায়, আমাদের বড় হাড়ের ভেতর থাকে এই স্পঞ্জ সদৃশ টিসু।
কখনও এই মায়েলমা সেল মানে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বাড়া প্লাজমা সেল একটি টিউমার গঠন করে একে বলে সলিটারি প্লাজমা সাইটোমা। এমন টিউমার অনেকগুলো হলে একে বলে মাল্টিপল মায়েলোমা।
কেন হয় মাল্টিপল মায়েলোমা?
অনেক ক্যান্সারের মত এই মাল্টিপল মায়েলোমার জানা কারণ নাই। তবে কিছু জিনিস সম্ভাবনা বাড়াতে পারে, যেমন: বয়স ৬৫+, আফ্রিকান আমেরিকান, পুরুষ আর পরিবারে কারো থাকলে।
প্রতিরোধ করা সম্ভব?
না । কারণ জীবন শৈলী পছন্দ এর কারন নয়। আগাম স্ক্রিনিং করে ধরাও সম্ভব নয়। আগে শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। বেশ কিছু দূর অগ্রসর না হলে উপসর্গ হয় না। বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে কাজ করছেন, নতুন অনেক ওষুধ আছে পাইপ লাইনে।
মাল্টিপল মায়েলোমার উপসর্গ
১। রক্তে
লো ব্লাড কাউন্ট: ( হিমোগ্লোবিন, লোহিত কণিকা কম) বা রক্ত শুন্যতা।
থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া: প্লাটিলেট কাউন্ট কম। শরীরে কালছিটে রক্তক্ষরণ।
লিউকোপেনিয়া: শ্বেত কণিকা কম। তাই সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ে।
২। হাড়ে ভাঙ্গন বা ফ্র্যাকচার
মায়েলমা কোষ হল হাড়ের ঘোর শত্রু।
স্বাভাবিক কি হয় আমাদের পুরানো হাড় অবিরাম গলে যায় যে কোষদের দ্বারা এদের বলে অস্টিওক্লাস্ট। আর এদিকে অস্টিওব্লাস্ট নামে কোষ অবিরাম তৈরি করে নতুন হাড়। এই ভাঙ্গা গড়ার খেলা চলছেই যুগপৎ যেন নদীর মত এর একূল ভাঙ্গে অকূল গড়ে।
কিন্তু মায়েলোমা সেল এই ভাঙ্গনের খেলা দ্রুত তর করে, আর এদিকে সে স্থান নিয়ে নেয় মায়েলোমা সেল।
ফলাফল: হাড় সব দুর্বল হবে, ফ্রাকচার হতে পারে যখন তখন।
৩। সংক্রমণ
প্লাজমা সেল তৈরি করে এনটিবডি ।কোল্ড হল এরা লড়াই করবে ভাইরাসের সাথে, ।।\ অসবাভাবক প্লাজমা সেল উৎপন্ন করে মনো ক্লনাল এনটি বডি এরা বিশেষ জীবাণুর বিরুদ্ধে নির্দেশিত হয়না তাই এরা সঙ্ক্রমনে কার্যকর হয়না । মায়েলমা সেল সুস্থ প্লাজমা সেল দের সরিয়ে নিজেরা ভিড় জমায় আর সরিয়ে দেয় জীবাণু রোধী অন্যান্য শ্বেত কোষ
৪। অন্যান্য যা লক্ষ্য করবেন
ক। হত বুদ্ধি ভাব , বিহবলতা
খ। পায়ে অবশ ভাব , দুর্বলতা
গ। কিডনি সমস্যা।
হাড় যেহেতু দ্রুত গলে তাই রক্তে বাড়তে পারে ক্যালসিয়াম। মনে হতে পারে তৃষ্ণার্ত আর পানিশূন্য ।
কী করে নির্ণয় করা হয়?
- রক্তের পরীক্ষা যেমন রক্তের ব্লাড কাউন্ট (কম) আর ক্যালসিয়াম মান এগুলো হতে পারে লাল ফ্ল্যাগ।
- এসপিইপি (সেরাম প্রোটিন ইমিউনো ইলেকট্রফরেসিস ) আর ইউপিইপি (urine protein electrophoresis,UPEP, ইউরিন ইমিউনো ইলেক্ট্রোফরেস) আর সে সাথে ইমিউনোফিক্সেশন। এসব করে বোঝা যাবে মনোক্লোনাল এন্টিবডি আছে কি না, থাকলে করতে হবে বোন ম্যারো।
- করা যাবে সিটি স্ক্যান এমআরআই হাড়ের অবস্থা বোঝার জন্য
- ক্যান্সারের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ হলো বোন ম্যারো বায়োপসি। একজন ডাক্তার একটি বিশেষ নিডল ঢুকাবেন হাড়ে আর এ থেকে সামান্য পরিমাণ টিস্যু বের করবেন। এর পর অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে মায়েলোমা সেলের উপস্থিতিতে পরিমাণ দেখবেন।
চিকিৎসা কখন
আশ্চর্য মনে হতে পারে উপসর্গ নাই একে বলে স্মলডারিং মায়েলমা (Smoldering myeloma), ভেতরে ধিকিধিকি জ্বলছে কিন্তু প্রকাশ নাই ডাক্তার বলতে পারেন, অপেক্ষা করুন, পরে।
মাল্টিপল মায়েলোমার চিকিৎসা
- নিতে হলে আছে নানা রকম
- ট্র্যাডিশনাল কেমোথেরাপি আর কর্টিকোস্টেরয়েড
- আছে ইমিউনো মডুলেটারি ড্রাগ
- প্রটিয়াসম ইনহিবিটার (Proteasome inhibitors)
- মনোক্লোনাল এন্টিবডি
অন্যান্য চিকিৎসা বিকল্প
বয়স ৬৫-এর নিচে বা ৬৫ + কিন্তু অন্যদিকে সুস্থ তখন ডাক্তার স্টেম সেল ট্র্যান্সপ্লান্টের কথা বলতে পারেন। এর আগে হাই ডোজ রেডিয়েশন বা কেমো নিয়ে অস্থি মজ্জার কোষ ধ্বংস করে এর পর দেয়া হয় সুস্থ স্টেম সেল। এ থেকে তৈরি হয় নতুন রক্ত। অনেক সময় নিজের কোষ ব্যবহৃত হয়। একে বল অটোলগাস ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট। দাতা থেকে এলে একে বলে এলোজেনিক ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট।
অন্যন্য হেলথ ইস্যু
ওষুধ আর ব্লাড ট্রান্সফিউসন সংশোধন করে রক্তশূন্যতা, অনেক সময় দেয়া হয় ইরিথ্রোপয়টিন, আইরন/দেয়া হতে পারে আইভি ইমিউনোগ্লোবিউলিন, বিসফস্ফনেট হাড়ের ভাঙ্গনের ঝুঁকি কমাতে।
ডাক্তারকে কী কী প্রশ্ন করতে পারেন?
১। কী করে আমি সুস্থ থাকব
২। ব্যাথা কমাবার আর কী আছে
৩। আমার অসুখের কোন পর্যায় আর এর মানে কী
৪। আমার চিকিৎসার কী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে
৫। আমার কি দ্বিতীয় মত নেবার প্রয়োজন আছে
ছবি: Cancer.org