মৃত্যুর পরও মগজ কাজ করে ১০মিনিটের বেশি। মৃত্যু সম্বন্ধে আমাদের আজকালকার ধারণা সরল সহজ। হৃদস্পন্দন বন্ধ হলেই আমরা মনে করি মৃত্যু হয়েছে। রক্ত সংবহনতন্ত্র আর শ্বসনতন্ত্রের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। শরীর বন্ধ, প্রাণবায়ু নির্গত হয়েছে। হার্ট বন্ধ হলেও মগজ তখনো কাজ করতে থাকে। সম্ভবত মগজের মৃত্যু হল শরীরের শেষ অংশের মৃত্যু। মৃত্যু ঘটার মুহূর্ত কয়েক আগে মগজ পায় তড়িৎ তরঙ্গের উল্লোল। কেউ জানেনা কেন এমন ঘটে। এটি অক্সিজেনও হারাতে থাকে। হৃদস্পন্দন আর শ্বাস ক্রিয়া বন্ধ হবার পরও ২-২০ সেকেন্ড থাকে চেতনা। কারন গুরু মস্তিষ্ক বাঁচতে পারে অক্সিজেন ছাড়া। মগজের এই অংশের কাজ হল চিন্তা ভাবনা আর সিদ্ধান্ত গ্রহন। পরিবেশ থেকে পাওয়া তথ্যকে ক্রিয়াতে রূপান্তরের কাজও এই অংশের। গুরু মস্তিষ্কের এসব কাজ থাকা সত্বেও আমরা মৃত্যুর আগে আগে সব রিফ্লেক্স কর্ম আর পেশীর কাজ হারিয়ে ফেলি।
মগজের তখন শেষ মুহূর্তের অভিজ্ঞতা হচ্ছে। মগজ কোষ তখন সক্রিয় করতে থাকে রাসায়নিক সেসব পথ যা মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে। মৃত্যু আর নিজের মধ্যে থাকে মাত্র একটু অক্সিজেন। সিপিআরের মাধ্যমে হার্ট আবার শুরু হতে পারে। আবার জেগে উঠার জন্য মগজ পেয়ে যায় যথেষ্ট অক্সিজেন। অক্সিজেন না থাকলে মগজ আত্মসমর্পণ করে। মগজের বেশির ভাগ অংশ মৃত। তবে একটি শেষ স্থান আছে যা সহজে ছেড়ে দেয়না জীবন স্পন্দন। স্মৃতি কেন্দ্র যা সঞ্চয় করে জীবনের অভিজ্ঞতা সঞ্চিত সব আবেগময় স্মৃতি। মগজের এই অংশ রক্তহানি দ্বারা পরাভূত হয়না গুরুতর আঘাত পেলেও। তাই শেষ হবার অন্তিম অংশ হল স্মৃতি কেন্দ্র। সে দ্বীপ নির্বাপিত হবার আগে আগে স্মৃতিকেন্দ্র জীবনের কিছু কিছু মুহূর্তে আলোর ঝলকের মত ঝলকায় চোখের সামনে।
ডাক্তাররা যখন প্রান্তিক অসুস্থ লোকের লাইফ সাপোর্ট খুলে মৃত ঘোষণা দেন এরপরও ১০ মিনিট মগজ থাকে সক্রিয়। সেসব লোকের ইলেকট্রো এনসেফালোগ্রাফিক রেকর্ড (ইইজি) করা হলো, প্রত্যেকের মধ্যে পাওয়া গেল অনেক পার্থক্য। এর মানে আমরা প্রত্যেকে মৃত্যুর সময় নিজস্ব একটি অভিজ্ঞতা নিয়ে মরি। মৃত্যুর ২ দিন পরও ২০০০-এর বেশি জিন কর্মরত থাকে। কিছু জিন অতি সক্রিয় আর এদের আছে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রদাহ উদ্দীপন, ইমিউন সিস্টেম প্রজ্জলিত করা আর স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই। কিছু জিন উদ্দীপিত হয় মাত্র ভ্রূণ বিকাশের সময়। হয়তো শরীর আসন্ন মৃত্যু থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চায়।
মৃত দেহেও ক্যান্সার বৃদ্ধি হতে পারে। রহস্যময়! তাহলে মৃত্যু সম্বন্ধে আমাদের ধারনা সঠিক নয়। মানুষকে মৃত ঘোষণার পরও শরীরের কিছু অংশ বেঁচে থাকে। যারা মৃত্যুর ঠিক পরপর যারা অঙ্গ দান করেন? মৃত দেহের অটোপসি করার সময় কি আরও সতর্ক হবার প্রয়োজন আছে? প্রয়োজন আর সময় আর গবেষণা দরকার।