আমাদের দেশের দৈনন্দিন ঘটনা সড়ক দুর্ঘটনা। বাস্তবতা কিংবা বাংলা সিনেমার কথাও যদি চিন্তা করি একটি সাধারণ দৃশ্য সবসময় দেখা যায়, কোন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলো কিংবা কেউ সিড়ি থেকে নীচ পরে গেলো, ৪-৫ জন পাজ কোলা করে একটা অটোরিকশা বা রিকশা করে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে রোগীর যে কত বড় ক্ষতি করে ফেলছে কিংবা ছোট ক্ষতিকে বড় ক্ষতিতে রুপান্তর করছে সেই বিষয়ে কেউ ওয়াকিবহাল নয়। আর সেই ক্ষতির নাম Spine Injury বা মেরুদণ্ডে আঘাত।
মেরুদণ্ড (Spine)
আমাদের পিঠের ঠিক মাঝ বরাবর শক্তিশালি যে অংশটুকু রয়েছে,যার মাধ্যমে আমরা দাড়াতে পারি,নুয়ে কিছু নিতে পারি মোদ্দাকথায় ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি তাকেই বলছি মেরুদণ্ড। এটি অসংখ্য হাড় নিয়ে গঠিত এবং এর মধ্যেই আবিষ্ট করে রেখেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুরজ্জুকে যা উৎপন্ন হয়েছে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে এবং পুরো শরীর কে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এই স্নায়ুরজ্জু দ্বারা।
আর এর মেরুদন্ডে আঘাত হলেই বলছি Spinal Injury. যেহেতু এর ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুরজ্জু রয়েছে তাই এর গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে বহুগুন।
মেরুদণ্ডে আঘাতের কারণ
- যেকোন সড়ক দূর্ঘটনা
- উচু স্থান থেকে ভূপাতিত হওয়া
- মেরুদণ্ডে আঘাত
- শরীরে উপর ভারী কোন বস্তু পতিত হওয়া
- ভারী বস্তু উত্তোলন করতে গিয়ে কিংবা ধাক্কা দিতে গিয়ে
- মেরুদন্ডের কিছু রোগ(যেমনঃ পট’স ডিজিজ, ক্যান্সার ইত্যাদি)
লক্ষ্মণসমূহ
- ৪ হাত-পা, কিংবা উভয় পা অবশ হয়ে যাওয়া
- নির্দিষ্ট একটি হাত কিংবা পা ও অবশ হতে পারে
- মেরুদন্ডে ব্যাথা
- শরীর নির্দিষ্ট অংশ কোন অনুভুতি না পাওয়া,কিংবা নির্দিষ্ট অংশে ব্যাথা বা ঝিনঝিন অনুভুতি হওয়া
- মল মূত্রের নিয়ন্ত্রণ না থাকা
মেরুদণ্ডে আঘাত হলে করণীয় ও চিকিৎসা
মনে রাখতে হবে মেরুদণ্ডে আঘাত হলে তাড়াহুড়ো না করে, আঘাতপ্রাপ্ত ব্যাক্তিকে সমতল ও শক্ত স্থানে শুইয়ে দিয়ে হবে। এম্বুলেন্স কল করা লাগবে।
মেরুদন্ডের আজ্ঞাত যাতে বৃদ্ধি না পায় এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে মেরুদন্ড স্থির থাকে। সেই জন্য সার্ভাইকাল কলার ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি পাওয়া না যাওয়া একটি শক্ত কাঠ নিয়ে পিঠের দিকে ঠিক মেরুদণ্ড বরাবর রেখে,কপাল বরাবর একটি গামছা বা কাপড় দিয়ে বাধতে হবে বুক বরাবর আরেকটি বাধ দিতে হবে। এতে করে মেরুদণ্ড স্থির থাকবে এবং আরো বেশি ক্ষতি হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এরপর ওই অবস্থায় নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা
রোগ পুরোপুরি নির্ণয় করতে এক্সরে’র প্রয়োজন। ক্ষেত্রবিশেষে এমআরআই ও প্রয়োজন হতে পারে।
আরেকটা বিষয় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে স্পাইন ইঞ্জুরির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ রোগী দীর্ঘদিন বিভিন্ন রকম অক্ষমতায় ভুগতে পারেন। সুতরাং চিকিৎসার চেয়ে বেশি প্রয়োজন এই ধরনের দূর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেই দিকে নজর দেওয়া, ঘটে গেলেও খুব শান্তভাবে উপরের শিখানো নিয়মে কাজ করে যাওয়া যাতে করে দূর্ঘটনাক্রান্ত ব্যাক্তির কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করা যায়। উপকার করতে গিয়ে যাতে কারো ক্ষতির কারণ না হয়ে যাই সেইদিকেও নজর দিতে হবে।