শিশুর ঘুম: বাচ্চাদের নিয়মিত ঘুমের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয়

একজন নবজাতক দিনে ১৮-২২ ঘন্টা ঘুমাতে পারে।বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঘুমের পরিমাণ কমতে থাকে।শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের জন্যে ঘুমের গুরুত্ব অপরিসীম।কিন্তু বাচ্চার ঘুম নিয়ে অভিযোগ করেন নি এমন বাবা-মা খুঁজে পাওয়া কঠিন।

Sleep Training বা ঘুমের প্রশিক্ষণ হচ্ছে এমন কিছু ছোট ছোট কৌশলের সমষ্টি যা আপনার শিশুকে নিজে নিজে ঘুমাতে সাহায্য করবে। শিশুর ঘুমের সময় নির্দিষ্ট করা গেলে তা যেমন বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে,তেমনি এর মাধ্যমে মায়ের পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও নিশ্চিত হয়। এতে করে মা বাচ্চার যত্ন নিতে আগের চেয়ে উদ্যোমী হয়ে উঠেন।

শিশুর “শারীরবৃত্তীয় ঘড়ি ” বা Circadian rhythm নিয়মিত হতে তিন বা চার মাস সময় লাগে। কারণ এই সময় শিশুর শরীরে শারীরবৃত্তীয় ঘড়ির জন্যে গুরুত্বপূর্ণ হরমোন মেলাটোনিন এর পরিমান খুবই কম থাকে। যে কারণে তিন মাস পর্যন্ত শিশুর ঘুমের সময় নির্দিষ্ট করার চেষ্টা বেশ কঠিন এবং অর্থহীন ও বটে।

আপনি যদি সদ্য সন্তানের বাবা-মা হয়ে থাকেন,তাহলে বাচ্চার ঘুমের কথা মনে পড়ে নিশ্চয়ই আপনার চোখে আবেগে জল চলে এসেছে!!!
শিশুর ঘুম অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন :নতুন দাঁত ওঠা,শারীরিক বৃদ্ধি,আশেপাশের পরিবেশ প্রভৃতি শিশুর স্বাভাবিক ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।বড় হবার সাথে সাথে ঘুমের সময় এবং ধরণে বেশ পরিবর্তন ঘটে। শিশুর ঘুমের ক্ষেত্রে কোনকিছুই চিরন্তন না,তাই বাচ্চা যদি সারাদিন ঘুমিয়ে সারারাত আপনাদের নিয়ে জেগে থাকে,তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না,কিছুদিনের মধ্যেই এই ঘুমের ধরণে পরিবর্তন আসতে বাধ্য।

একটানা নির্বিঘ্নে ঘুমানোর জন্যে আমাদের সবার ই কিছু পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন হয়,শিশুরাও তার ব্যতিক্রম না।

*শিশু ঘুমিয়ে পড়ুক কিংবা না পড়ুক,আপনি যদি একটি শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেন,তাতে মা এবং শিশু দুজনেই উপকৃত হবে।শিশু পুরোপুরি ঘুমিয়ে পড়ার পর তাকে বিছানায় শোয়ানোর পরিবর্তে ঝিমুতে শুরু করলেই বিছানায় শুইয়ে দিন,কারণ একবার ঘুমিয়ে পড়ার পর কোন কারণে জেগে উঠে নিজেকে নতুন পরিবেশে আবিষ্কার করে,তাহলে তাকে পুনরায় ঘুম পাড়াতে বেশ বেগ পেতে হয়।

*খুব গরম কিংবা খুব ঠান্ডা কোনটিই শিশুর ঘুমের জন্যে অনুকূল না। তাই ঘরের তাপমাত্রা যথাসম্ভব নাতিশীতোষ্ণ রাখার চেষ্টা করুন। রাতের বেলা হালকা উষ্ণ জাতীয় কোন চাদর ব্যবহার করুন যাতে শিশুর খুব বেশি ঠান্ডা না লাগে।

*ঘুমানোর সময় ঘরের আলো যথাযম্ভব কমিয়ে দিন।রাতের বেলা খাওয়ানো বা ডায়াপার বদলের জন্যে হালকা আলোর বাতি ব্যবহার করতে পারেন।।গবেষণায় দেখা গেছে লাল আলো শিশুর ঘুমে কম ব্যাঘাত ঘটায়।

*শিশু রাতে কম ঘুমালে কিংবা দেরীতে ঘুমালেও সকালে একই সময়ে জাগিয়ে দিন,এতে করে শিশু ঘুমের জন্যে আগ্রহ অনুভব করবে এবং পরের রাতে সহজে ঠিক সময়ে ঘুমিয়ে পড়বে।

প্রত্যেক শিশুর ঘুমের সময় এবং ধরণ ভিন্ন।তাই ধৈর্য ধরে শিশুর ঘুমের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।কারণ শিশু পর্যাপ্ত সময় ধরে ঘুমোলে মায়েরাও বিশ্রাম নিতে পারবেন এবং এর ফলে তাঁরা আরো ভালোভাবে নিজের এবং বাচ্চার যত্ন নিতে পারবেন।

Dr Punam Palit MBBS BCS (Health)

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.