ডায়াবেটিস -একবিংশ শতাব্দীতে এসে ডায়াবেটিস সম্পর্কে ধারণা নেই কিংবা নিজ পরিবার অথবা নিকট আত্মীয়দের মধ্যে কারো ডায়াবেটিস নেই এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম।
চলছে সিয়াম সাধনার মাস-মাহে রমজান, সাথে প্রতিদিন বাড়ছে তাপদাহ, সেইসাথে আহার থেকে বিরত থাকার দৈর্ঘ্য। এই সময় রোজা রাখতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ঝুকিতে যারা থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা।
আজ জানবো এমন একটি সমস্যা সম্পর্কে যা আমরা সাধারণত সবাই জানি, সাধারণ ভাষায় সবাই বলে থাকি Sugar Nil হয়ে যাওয়া, আর মেডিকেলীয় ভাষায় বলি Hypoglycemia.
রোজার সময় এই সমস্যা হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে কারণ হুট করে প্রতিদিনকার খাবারের রুটিন বদলে যাওয়া,দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা, সেইসাথে নতুন রুটিনের সাথে ঔষধের ডোজ মিলিয়ে না নেওয়া। আমাদের মস্তিষ্কের মূল খাবার হলো শর্করা আর কিছু সময়ের জন্যও যদি মস্তিষ্ক এই শর্করাবিহীন থাকে তাহলে ঘটে যেতে পারে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত।
লক্ষণ
আসুন জেনে নেই Hypoglycemia এর লক্ষণসমূহ
১) অবসাদগ্রস্ত লাগা, চোখে অন্ধকার দেখতে থাকা
২) Pulse Rate বৃদ্ধি পাওয়া
৩) অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
৪) শরীরের কাপাকাপি অথবা খিচুনী হওয়া
৫) শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া
৬) অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
চিকিৎসা বা করণীয়
মনে রাখতে হবে ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই বাসায় গ্লুকোমিটার(রক্তের শর্করা মাপার যন্ত্র) রাখতে হবে। এতে করে অনেকের জীবন বাচানো সম্ভব হবে। যখনই কোন ডায়াবেটিক রোগীর উপরোক্ত লক্ষণসমূহ দেখা দিবে অতিদ্রুত গ্লুকোমিটারের সাহায্যে মেপে দেখতে হবে। যদি রক্তের গ্লুকোজ ৩.৯ মি.মোল/লি অথবা ৭০ মি.গ্রা/ডি.এল এর কম হয় তাহলে বুঝতে হবে রোগী হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় ভুগছে।
👉 যদি রোগীর জ্ঞান থাকে অতি দ্রুত এক গ্লাস গ্লুকোজ বা চিনির শরবত খাইয়ে দিন,এবং হালকা নাস্তা দিতে পারেন।
👉 যদি রোগী অজ্ঞান থাকে তাহলে কোন অবস্থাতেই জোর করে শরবত খাওয়ানোর চেষ্টা অথবা শোয়ানো অবস্থায় কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করা যাবেনা,এতে করে খাবার ফুসফুসে গিয়ে নতুন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
অতএব এই মুহুর্তে চেষ্টা করবেন মধু কিংবা চিনি কিংবা গ্লুকোজ অর্থাৎ হাতের কাছে যা পাওয়া যায় সেগুলো মুখগহ্বরে এবং দাতের চারপাশে দিয়ে দেওয়া। এতে করে দ্রুত শোষণ হয়ে রোগীকে কিছুটা সাহায্য করবে। পাশাপাশি অতি দ্রুত কালক্ষেপণ না করে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার ব্যবস্থা করা।
প্রতিকার
এ ধরনের সমস্যাগুলো থেকে বাচতে পূর্ব পরিকল্পনা করতে হবে।
👉 রোজা শুরুর পূর্বেই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে ডায়াবেটিসের ঔষধের সময়,ডোজ ও খাবারের নিয়ম ঠিক করে নেওয়া।
👉 ডায়াবেটিস রোগী যেখানেই যাক না কেন পকেটে একটি চকলেট কিংবা স্যুগার বল রাখতে পারে,তাহলে কখনো এরকম লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে মুখে দিয়ে দিতে পারে।
সবার রমজান সুন্দর কাটুক, ডায়াবেটিস যাতে কারো ইবাদতে অংশগ্রহণের বাধা না হোক সেই আশা থাকলো।