অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টিক অ্যানিওরিজম (Abdominal Aortic Aneurysm)

হার্ট থেকে যে আর্টারি শরীরের বিভিন্ন অর্গান ও নিম্নাংশে রক্ত বয়ে নিয়ে যায় একে বলে অ্যাওর্টা। অ্যাওর্টা শরীরের সবচেয়ে বৃহৎ আর্টারি বলে একে মহাধমনীও বলা হয়।

অ্যাওর্টা তার গতিপথে অ্যাবডোমেন (উদর) দিয়ে যায়। এ অংশকে বলে অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টা।  শরীরের কোন অংশে রক্তনালীর দেয়ার দুর্বল হয়ে পড়লে অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে সে অংশ স্ফীত হয়। মেডিক্যালের ভাষায় একে বলে অ্যানিওরিজম।  অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টার ক্ষেত্রে এমন ঘটলে একে বলে অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টিক অ্যানিওরিজম (Abdominal Aortic Aneurysm, সংক্ষেপে AAA)। বয়স ৬০-এর অধিক যাদের তারা আছেন উচ্চ ঝুঁকিতে, নারীদের তুলনায় পুরুষে অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টিক অ্যানিওরিজমে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। রক্তনালীর দেয়াল অ্যানিওরিজমের ফলে বিদীর্ণ বা ছিঁড়ে যেতে পারে (Ruptured Aortic Aneurysm)। অত্যধিক রক্তপাত থেকে আছে মৃত্যুর ঝুঁকি। আমেরিকায় ৫৫ ঊর্ধ্ব বয়সীদের মৃত্যুর প্রথম দশ কারণের মধ্যে অন্যতম এই Ruptured Aortic Aneurysm।

অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টিক অ্যানিওরিজম কেন হয়?

ধূমপান এবং উচ্চ রক্তচাপ অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টিক অ্যানিওরিজমের প্রধান শত্রু, রক্তনালীতে চর্বি জমে এর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হলেও (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস, atherosclerosis) হতে পারে AAA। উচ্চ রক্তচাপে রক্তনালীর দুর্বল অংশ স্ফীত হয়ে ওঠে। বয়সের কারণেও রক্তনালীর গাঠনিক পরিবর্তন ঘটে দুর্বল হতে পারে, এছাড়া দুর্ঘটনায়, সংক্রমণে এবং এলাসর-ডানলস সিন্ড্রোম (Ehlers-Danlos syndrome)-এর মতো দুর্লভ রোগ হলে হতে পারে অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টিক অ্যানিওরিজম।

লক্ষণ ও উপসর্গ

অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টিক অ্যানিওরিজমের সাধারণত কোন লক্ষণ থাকে না। পেটে বা পিঠের মাঝ বরাবর ব্যথা হতে পারে এ রোগের প্রধান লক্ষণ। নাভি বরাবর পালস/স্পন্দন অনুভব হতে পারে।

কীভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়

অ্যানিওরিজম আকারে বড় হলে ডাক্তার শারীরিক পরীক্ষা করার সময় পেটের মাঝ বরাবর অ্যাওর্টার স্পন্দন অনুভব করতে পারেন। অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টিক অ্যানিওরিজম সন্দেহ হলে ডাক্তার পেটের আল্ট্রাসাউন্ড (অ্যাবডোমিনাল আল্ট্রাসাউন্ড) এবং সিটি স্ক্যান (কম্পিউটেড টমোগ্রাফি, computed tomography) করার পরামর্শ দিবেন। আল্টাসাউন্ডে মোটামুটি শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টিক অ্যানিওরিজম নির্ণয় ও আকার পরিমাপ করা যায়। সিটি স্ক্যান সবচেয়ে সঠিকভাবে আকার নির্ণয় করতে পারে।

চিকিৎসা

রোগ নির্ণয় হলে সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টিক অ্যানিওরিজম ৫ সেমির বেশি হলে অপারেশন এবং ৪ সেমির কম হলে ডাক্তারের পরামর্শ মতে ফলোআপ নিতে হবে।  অ্যানিওরিজম বিদীর্ণ হলে অতিরিক্ত রক্তপাত থেকে রোগী শকে চলে যায়, জরুরি সার্জারির মাধ্যমে না সারালে মৃত্যু অনিবার্য। সার্জারিতে অ্যাওর্টার দৃঢ়তা বজায় রাখতে প্রায়শ স্টেন্ট বা সিন্থেটিক ম্যাশ টিউব ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ফলোআপ কীভাবে করা হয়

বছরে এক বা একাধিকবার ফলোআপ করে দেখতে হয় অ্যানিওরিজমের আকার স্থিতিশীল আছে কি না বা বাড়ছে কি না। প্রতি বছর ১ সেমির বেশি বাড়লে সার্জারির করার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ভাস্কুলার সার্জন বিভিন্ন ঝুঁকি ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন।

কী করবেন, কী করবেন না

  • নিশ্চিত করুন আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে।
  • মনে রাখা জরুরি  অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টিক অ্যানিওরিজম যেকোন সময় ছিঁড়ে যেতে পারে, ছিন্নভিন্ন বা বিদীর্ণ হতে পারে।
  • অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টিক অ্যানিওরিজম হলে ডাক্তারের পরামর্শ গুরুত্ব সহকারে নিন। পেটে বা পিঠে ব্যথা হলে অবহেলা নয়।
  • সার্জারির পর জ্বর, ব্যথা বা অপারেশনের জায়গায় রক্ত বা যেকোন ধরনের লিকেজ হলে আপনার সার্জনের পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না।
  • চার এবং পাঁচ– এ দুইটি সংখ্যা মনে রাখুন। অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টিক অ্যানিওরিজম ৫ সেমির বেশি হলে অপারেশন এবং ৪ সেমির কম হলে ডাক্তারের পরামর্শ মতে ফলোআপ নিতে হবে।
  • ধূমপান এবং উচ্চ রক্তচাপ অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টিক অ্যানিওরিজমের প্রধান শত্রু। ধূমপান করবেন না রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।

Dr Omar Faruq MBBS BCS (Health)

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.