প্রথম ভেরিয়েন্ট
নভেম্বর যুক্তরাজ্য গেল লকডাউনে। করোনা রোগীদের সংখ্যা তুঙ্গে যাওয়া ঠেকাবার জন্য। কিন্তু ইংল্যান্ডের কেন্টে এল নতুন করোনা ধরন অনেক বেশি সংক্রমণক্ষম, সিডিসি সতর্ক করলেন নতুন ইউকে ধরন ছড়াচ্ছে আমেরিকায়। বি.১.১.৭। দু’মাস পর এটি পাওয়া গেল আরও ৩০টি দেশে। ৫ মাস পর এটি হল আমেরিকার প্রধান ধরনের ভাইরাস। পর পর আর অনেক ভেরিয়েন্ট আসতে থাকল পৃথিবীতে।
কিন্তু কেন?
ভাইরাস খুব সরল, এদের আছে এক প্রোটিন আবরণ যা ঘিরে রেখেছে জিন পদার্থ ডিএনএ বা আরএনএ। এই জিনেটিক অণু যেন সারি সারি বর্ণ, এই জিন সঙ্কেতের প্রতিটি অংশে আছে একটি বিশেষ প্রোটিন তৈরির নির্দেশ যা ভাইরাসকে কাজ করার সহায়ক। ভাইরাস নিজের অনেক প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে। প্রতিবার ভাইরাস একজনকে সংক্রমিত করলে এটি নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে, বার বার পুনঃজনন করে বার বার। এভাবে এর হুবুহু নকল তৈরি হতে থাকে। কালক্রমে এর একটি ভুল হয় কোন সময় একটি জিন সংকেতের শব্দ থাকে না অথবা আসে অন্য শব্দ এধরনের ভুলকে বলে মিউটেশন। এতে ভাইরাস তৈরির নির্দেশে কিছু পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তিত ভাইরাস হল মিউটেন্ট।
যেহেতু ভাইরাস অনবরত নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে থাকে তাই এর স্বাভাবিক কাজে হয় বদল। যেমন অনেক সময় এমন মিউটেশন তেমন বোঝা যায় না কিন্তু কখনও তা আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে। বি.১.১.৭। এমন মিউটেশনে ভাইরাস মানব কোষ রিসেপ্টরের সংগে আরও ভাল ভাবে যুক্ত হতে পারে আর মানব কোষের মধ্যে ঢুকতে পারে আরও ভাল।
করোনা ভাইরাস স্পাইক প্রোটিন দ্বারা আবৃত। এরা রিসেপ্টারের সাথে যুক্ত হয় আর ভাইরাস সঙ্ক্রমিত করে মানব কোষকে। বি.১.১৭ বা আলফা ভেরিয়েন্টের স্পাইক প্রোটিনে হয় অনেক গুলো মিউটেশন। মিউটেশনের ফলে ভাইরাস সহজে দেহ কোষে যুক্ত হতে পারে। আর এতে ভাইরাস হয় অনেক বেশি সংক্রমণক্ষম।
ভাইরাস কিন্তু সক্রিয় সিদ্ধান্ত নেয়না। মিউটেশন হল যথেচ্ছা এলোমেলো ত্রুটি। যত সময় বেশি ভাইরাস থাকে চারপাশে যত বেশি মানুষকে সংক্রমিত করে, এদের মধ্যে পরিবর্তন তত বেশি হয়। আর এই ত্রুটি জমতে জমতে এরা ক্রমে আরও বিপজ্জনক হয়ে যায় ।
চারটি উদ্বেগজনক ভেরিয়েন্ট
বি.১.১.৭ (আলফা), বি.১.৩৫১ (বিটা), পি.১ (গামা) , বি.১.৬১৭.২ (ডেল্টা)। এরা হল উদ্বেগজনক ধরন। সব হল স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশন।
সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে ডেল্টা। এটি হল ডাবল মিউটেন্ট। এতে অনেকগুলো মিউটেশন হলেও তাৎপর্যপূর্ণ দুটি হল এল৪৫২আর (L452R) আর ই৪৮৪কিউ (E484Q)। এই মিউটেশন ভাইরাসকে করেছে অনেক বেশি সংক্রমণক্ষম ।
সৌভাগ্যবশত ভ্যাকসিন স্বাভাবিক ইমিউনিটি থেকে শক্তিশালী। যতদিন এই ভাইরাস ছড়াবে তত দিন এটি অনবরত এর প্রতিলিপি তৈরি করতে থাকবে।
ভ্যাকসিনই ভরসা
ভেরিয়েন্ট বন্ধ করতে চাইলে আমাদের ভাইরাসকে বন্ধ করতে হবে। ভাইরাস উদ্ভুত হয়েছে কিন্তু অচিহ্নিত কিছু নয়, ভ্যাকসিন এখনও সব ভেরিয়েন্টদের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে, সমস্য হল আমরা বিশ্ব জুড়ে এত ভ্যাকসিন পাই না। এতে ভাইরাসের নিজকে পরিবর্তনের বেশি সুযোগ পাচ্ছে আর আরও ধ্বংস লীলা চালাবার সুযোগ পাচ্ছে। ভেরিয়েন্টদের ক্রম বৃদ্ধি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে অতিমারি শেষ হয়নি।