খিঁচুনি, মৃগী রোগ বা এপিলেপসি নামেও পরিচিত। এটি একটি মস্তিষ্কের দীর্ঘমেয়াদি কিন্তু সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য সমস্যা। হঠাৎ করে বিভিন্ন কারণে মস্তিষ্কের কোষগুলোর অতিরিক্ত উদ্দীপনায় লক্ষনসমূহ প্রকাশ পায়।
লক্ষণসমূহ
১. প্রচন্ড ঝাঁকুনি সহ কাঁপুনি (পুরো শরীরে অথবা নির্দিষ্ট অংশে) অথবা
২. হাত পা শক্ত হয়ে যাওয়া।
৩. চোখ উল্টে যাওয়া, মুখ একদিকে বাঁকা হয়ে যাওয়া।
৪. অথবা এমনও হতে পারে, হঠাৎ করে অন্যমনস্ক হওয়া, হাতে কোনো কিছু থাকলে সেটা পড়ে যাওয়া।
৫. মুখ দিয়ে ফেনার মতো আসতে পারে।
৬. এমনকি পায়খানা-প্রস্রাবও হয়ে যেতে পারে।
৭.মাটিতে পরে যায়,অনেকের জিহ্বা কেটে যায়।
বিভিন্ন কারনে খিঁচুনি (প্রাইমারি, সেকেন্ডারি কারণ) হতে পারে
যেমন:
১. মস্তিস্কের ইনফেকশন
২.হেড ইনজুরি
৩.শরীরে লবনের তারতম্য
৪.স্ট্রোক
৫.ব্রেইন টিউমার ইত্যাদি।
তাই, খিঁচুনি হলেই স্নায়ুরোগ, মনোরোগ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বা কমপক্ষে একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকিৎসক মৃগী রোগ হিসেবে ডায়াগনোসিস করলেই ভয় পাবেন না
কারণ:
১.এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য /নিয়ন্ত্রণ যোগ্য।
২.চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী চললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সারাজীবন ওষুধ খেতে হয় না।
৩.এটি ছোঁয়াচে নয়।
৪.এটি হওয়া মানে পাগল হওয়া নয়।
৫.বাংলাদেশেই এই রোগের বিজ্ঞানসম্মত সুন্দর চিকিৎসা সম্ভব।
খিঁচুনি রোগীদের জন্য পরামর্শ
১.ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলবেন।
২.অবশ্যই নিয়মিত ওষুধ খাবেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ বাদে কোনভাবেই ওষুধ বন্ধ করবেন না।
৩.রাত ১০ টার মধ্যে ঘুমাবেন,রাতে খেয়ে ঘুমাবেন।
৪.মানসিক চাপমুক্ত থাকবেন।
৫.টেলিভিশন, মোবাইল / ল্যাপটপে যথাসম্ভব কম সময় দিবেন।
৬.নদী, পুকুর বা সমুদ্রের পানিতে নেমে গোসল করা যাবেনা। এমনকি গোড়ালি সমান পানিতেও নামা উচিত না।
৭.গোসলখানার ছিটকিনি বন্ধ করা অনুচিত।
৮.আগুন ও ধারালো জিনিস থেকে দূরে থাকবেন।
৯.ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পরিহার করবেন(যেমন,রেলিংবিহীন ছাদ,পাহাড় ইত্যাদি)
১০.একাকী ব্যস্ততম রাস্তা পারাপার অনুচিত।
১১.রোগী বাচ্চা হলে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন,ঝুঁকিপূর্ণ খেলাধুলা পরিহার করান।
১২.চিকিৎসকের পরামর্শ বাদে ড্রাইভিং শুরু করবেন না।
খিঁচুনি রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা
১.শান্ত থাকুন, বেশি মানুষজন জড়ো হতে দিবেন না। রোগীকে জোরে চেপে ধরবেন না।
২.রোগীকে দ্রুত মেঝেতে এক পাশ করে শুইয়ে দিন,মাথার নিচে বালিশ বা কাপড় দিতে পারলে ভাল।
৩.দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে কিনা খেয়াল করুন। শ্বাস নেয়ার সুবিধার্তে পোশাক আলগা করে দিন,টাই থাকলে লুজ করে দিন
৪.অবশ্যই একপাশ করে শুয়ে দিন- এতে লালা,থুতু পাশে গড়িয়ে পড়বে, শ্বাসনালীতে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করবে না
৫.ধারালো জিনিসপত্র দ্রুত সরিয়ে ফেলুন।
৬.এ সময় মুখে কোনভাবেই আংগুল, চামচ কিচ্ছু দিবেন না।
৭.কোনভাবেই চামড়ার জুতা,মরিচ পোড়া নাকে শুকানো যাবে না।
৮. পুরোপুরি জ্ঞান না আসা পর্যন্ত রোগীকে একা রাখবেন না, মুখে কিছু খাওয়াবেন না।
৯.খিঁচুনির পর রোগীকে একটু খোলামেলা জায়গায় বিশ্রাম নিতে দিন।
১০. খিঁচুনি পাঁচ মিনিটের বেশি স্থায়ী হলে দ্রুত নিকটস্থ হাস্পাতালে যোগাযোগ করবেন।