child reading books

শিশুদের কীভাবে বইয়ের পোকা হিসেবে গড়ে তুলবেন?

১। নিজেই হয়ে উঠুন আদর্শ

শিশুদের প্রথম সুপারহিরো তার বাবা-মা। এরপর পরিবারের অন্য সদস্যরা। শিশুরা অনুসরণ করে বড়দের। পরিবারে বড়দের মাঝে বইপড়ার অভ্যাস থাকলে শিশুরা তাদের দেখাদেখি বই পড়তে শুরু করে। শিশুরা আদেশ উপদেশ দিলে সরাসরি শোনে না, কিন্তু আপনাকে পড়তে দেখলে তার মাঝে সে ছাপ পড়তে থাকবে।

২। গড়ে তুলুন পারিবারিক পাঠাগার

পারিবারিক পাঠাগারের মাধ্যমে বইয়ের জগতের সাথে পরিচিত হলে চিন্তার জগতটাও শুরু থেকে বড় হবে। সেখানে শিশুর বইয়ের জন্য আলাদা স্পেস দিলে ভালো। শিশুর শোবার ঘরে বই রাখার জন্য একটা সিস্টেম করে দিতে পারেন। বারান্দা, বাগান, বাড়িতে একটা নিরিবিলি জায়গা রাখুন সম্ভব হলে যেখানে শিশু নিরিবিলি বই পড়তে পারবে।

৩। দিনের নির্দিষ্ট সময় রাখুন বইয়ের জন্য

সপ্তাহের ৩-৫ দিন, নির্দিষ্ট একটা সময়, যেমন সন্ধ্যার পর, বই নিয়ে শিশুদের উপযোগী আলোচনা করুন। বড় বড় লেখক কবিদের জীবনের মজার ঘটনা; রবীন্দ্রনাথের, নজরুলের ছেলেবেলা কেমন ছিল নিজের ভাষায় বলতে পারেন। শিশুমনে এসব ঘটনা কল্পনা শক্তি যেমন বাড়াবে তেমনি তার মাঝে সহানুভূতি জাগাবে। শিশুরা ঘুমানোর আগে গল্প শুনতে শুনতে কল্পনার জগতে হারিয়ে যায় এবং ঘুমিয়ে পড়ে। হতে পারে গল্পের কোন চরিত্রকে স্বপ্নে আবিষ্কার করে রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল, ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত আর ঘুমই এলো না।

৪। ছুটির দিনে ঘুরে আসুন লাইব্রেরি, বিখ্যাত কোন স্থান

শহরের বিভিন্ন লাইব্রেরির সাথে শিশুর পরিচয় করিয়ে দিন। তার জন্য উপযুক্ত কর্নার দেখিয়ে দিলে সে নিজেই এক্সপ্লোর করবে। বড়দের পছন্দ জোর করে ধরিয়ে দেয়ার দরকার নেই। দেশে-বিদেশে বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্মৃতি বিজড়িত স্থানে ঘুরে আসুন, কেন এ স্থান বিখ্যাত তা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলে শিশুরা শুনতে শুনতে অনেক কিছু জেনে যাবে। জোর করে তথ্য জানানো ঠিক নয়। শিশুমনে স্মৃতি হয়ে থাকবে এসব স্থান। বাকিটা সময়ের সাথে সাথে সে জেনে যাবে।

৫। জন্মদিনে বই উপহার দিন

কেক, পুতুল, খেলনার পাশাপাশি জন্মদিনে শিশুর বয়স উপযোগী বইও উপহার দিন। রূপকথার বই, মহাকাশ, বিশ্ব, গল্পের বই। রঙিন, সুন্দর ডিজাইনের বই শিশুদের আকৃষ্ট করে। বিশেষ দিনে আপনার উপহার শিশু সারাজীবন মনে রাখবে।

৬। বই নিয়ে বকা নয়

বই বলতে আমাদের দেশের অভিভাবকরা শুধু সিলেবাস রিলেটেড বই বোঝেন। গল্প উপন্যাস এসব আউট বই বলেন, অথচ আউট বই না পড়লে চিন্তার জগত বড় হয় না। সিলেবাসে কতটুকুই বা আছে। শিশু যদি ক্লাসের বইয়ের ভেতর লুকিয়ে গল্পের বই পড়ে তাহলে তাকে উৎসাহিত করুন, বকা দেয়ার চিন্তাও করবেন না।

শিশুরা অনেক সময় বইয়ে আঁকিবুঁকি করে, পাতা ছিঁড়ে ফেলে। এসব করলেও বকা দিবেন না।

৭। লাইব্রেরির মেম্বারশিপ নিতে উৎসাহিত করুন

কাছাকাছি কোন লাইব্রেরির মেম্বারশিপ নেয়ার সুযোগ থাকলে শিশুকে মেম্বার হতে উৎসাহ দিন, লাইব্রেরি থেকে বই আনলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফেরত দেয়ার তাড়া থাকবে। সে লক্ষ্যে তার বাড়তি বই পড়া হবে, জ্ঞানের বিচিত্র শাখার সাথেও পরিচিত হবে ধীরে ধীরে।

৮। বুক ক্লাব, পাঠচক্র থাকলে বোনাস

সমবয়সীদের নিয়ে এসব বইপোকারা বুক ক্লাব করতে চাইলে এগিয়ে আসুন, ওদের নাস্তার আয়োজনে আপনাকে স্পন্সর হিসেবে পেলে ভালোই হবে। এমন বইপোকাদের মাঝেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের ডাক্তার, সাহিত্যিক, ফিল্মমেকার, অথবা কোন এক মহাকাশজয়ী।

Dr Omar Faruq MBBS BCS (Health)

Add comment