মাইগ্রেন কেন হয়? করণীয় ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি (Migraine)

জুন হল মাইগ্রেন সচেতনতা মাস।

কত ভাবে যে শুরু হয় এই আধকপালি। বলছিলেন এক মাইগ্রেনের রোগী। “আমার পছন্দ রোদেলা দিন, যখন সূর্য আড়ালে যায় মেঘের নয়ত কুয়াশার। রোদহীন দিন হল আমার মাইগ্রেন আসার দিন।”
মাইগ্রেনের নানা উস্কানি জিনিষের কথা আমরা জানব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, “মাথা ধরা সমস্যা হল স্নায়ু তন্ত্রের এক সবচেয়ে সচরাচর সমস্যা। বিশ্বে ৭ জনের একজনের আছে মাইগ্রেন আর নারীদের মধ্যে হয় তিন গুন বেশি।”

জটিল এই স্নায়ুবিক রোগের নেই নিরাময় আর এর আক্রমণ বেশি নারীদের মধ্যে। মাইগ্রেন রিসার্চ ফাউন্ডেশনের মতে ক্রনিক মাইগ্রেন ভুক্তভুগিদের ৮৫% হলেন নারী। আর এর উপশমে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারেন পরিবার। এই আধকপালি পঙ্গু করে ফেলে সাময়িক আর তখন চাই অবলম্বন।

কেবল মাথা ধরা বলে ভ্রান্ত ধারণা হয় মাইগ্রেন সম্বন্ধে। তবে এ রোগ প্রভাব ফেলে ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন।

মাইগ্রেন মোকাবেলায় প্রথম কাজ হল এর ট্রিগারগুলো জানা আর কী করলে আর না-করলে একে ঠেকানো যায়, জানতে হবে। এজন্য পরিবারের সাহায্য দরকার। মাইগ্রেন হয় এমন একজন নারী বলছিলেন, “আমার স্বামীর ইলেকট্রনিক মিউজিক জোরে বাজানোর অভ্যেস আর আমার এতে মাইগ্রেন হয় স্বামীকে জানালাম তখন সে বিকল্প পথ নিল।”

কর্মস্থলে অনেকের হয় মাইগ্রেন। আছে মাইগ্রেন রেস্কিউ কিট। এর মধ্যে আছে বরফের পট্টি, ফেস মাস্ক, ইয়ার প্লাগ, আর ওষুধ আর থাকবে জরুরি ফোন নাম্বার এমন স্বজনের যে আপনার সন্তানকে স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে যাবে এমন।

RESCUE KIT MIGRAINE

 

হঠাৎ তীব্র আক্রমণ হলে কী করা

১। আলোর প্রতি সংবেদ্যতা: ওয়ার্ক স্টেশনের আলো, হয়ত ফ্লুরোসেন্ট আলো মাইগ্রেন আনে তাহলে যদি একে সরানো সম্ভব না হয় তাহলে দিতে পারেন ফিল্টার যাতে উজ্জ্বলতা কমে।
২। স্ক্রিন সময়: যদি স্ক্রিনের আলো বেশি প্রভাব ফেলে তাহলে দিতে পারেন এন্টিগ্লেয়ার স্ক্রিনের উপর।
৩। গন্ধ, বাস: গন্ধহীন পরিবেশে কাজ করতে পারেন।
৪। শব্দ: শব্দ মাইগ্রেন আনলে শব্দ হ্রাসের ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন।
৫। অনেকের প্রয়োজন শান্ত এলাকা। সুপার ভাইজার কে বলে কিছু সময়ের জন্য তা পেতে পারেন।

 

মাথাধরা চিকিৎসায় অগ্রগতি

  • এসেছে নানা ওষুধ মাইগ্রেন প্রতিরোধে। এরা তীব্রতা আর পুনঃপুনঃ হওয়া ঠেকাতে পারে। Erenumab (Aimovig®), Fremanezumab (Ajovy), Galcanezumab (Emgality)।
  • মাইগ্রেন শুরু হলে একে বন্ধ করতে বা স্থায়িত্ব কাল কমাতে এসেছে চিকিৎসা। Ubrogepant (Ubrelvy)-এর মত ওষুধ।
  • এসেছে ওষুধ নয় এমন ডিভাইস: এসেছে gammaCore® (nVNS) নতুন উদ্ভাবন।
  • সব ডাক্তার বুঝে দেবেন, সবার সব ওষুধ কাজ দেয় না।

GAMMA CORE

 

কেন হয় মাইগ্রেন

একজন নামকরা মাইগ্রেন গবেষক মাইকেল এ মস্কউই পেলেন সম্মানজনক ব্রেন এ্যাওয়ার্ড। তিনি হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের নিউরোলজির অধ্যাপক। এক্সপেরিমেন্টাল মডেলে তিনি দেখিয়েছেন, যখন ট্রাইজিমিনাল স্নায়ু তন্তু উৎসারিত করে যে নিউরোপেপটাইড, এরা মগজের আবরক মেনিঞ্জেসের রক্তনালি প্রসারিত করে, এরপর প্রদাহ আর ব্যথা বেদনা। তিনি প্রথম দেখালেন উৎসারিত এসব নিউরোপেপটাইড কাজকর্ম রোধ হবে চিকিৎসার নতুন ধারা।

 

  • ইমোশনেল স্ট্রেস হলে কিছু রাসায়নিক উৎসারিত হয় যা ঘটায় রক্তনালী তে পরিবর্তন এর ফলে মাইগ্রেন আক্রমন। স্ট্রেস খুব বেশি হলে মাইগ্রেন হতে পারে বার বার। স্ট্রেস হয় দুশিন্তা হলে, উদ্বেগ, শক, বিষণ্ণতা, উত্তেজনা, মানসিক অবসন্নতা হলে।
  • সারাদিন অটল ব্যথা নিয়ে সময় কাটানো কি কষ্টের ভুক্তভুগি জানে, হতে পারে বাচ্চাদের , স্কুল ছাত্র ছাত্রিদের। ৫-১৫ বছরের ১০ % বাচ্চার হয় মাইগ্রেন। একজনের মাইগ্রেন হলে তার বাচ্চার মাইগ্রেন হবার ৪০ % সম্ভাবনা। মা বাবা দুজনের হলে সন্তানের ঝুকি ৯০% । অর্ধেক মাইগ্রেন রোগীর প্রথম আক্রমণ হয় ১২ বছর হবার আগে। আর প্রতিদিন ২০ মিলিয়ন মিগ্রেনের ঘটনা ঘটে বিশ্ব জুড়ে ।
  • মিগ্রেনের ব্যাথার সাথে প্রায় থাকে আলো, শব্দ, স্পর্শের প্রতি অতি স্পর্শকাতরতা, আর থাকে বমিভাব, বমি।

মাইগ্রেন ট্রিগার বা যে সব উপাদান উস্কে দেয় মাইগ্রেন

  • এলকোহল, ক্যাফিন, কোন ও বেলার খাবার বাদ দেওয়া, উচ্চ শব্দ, সুগার, স্ট্রেস, ভ্রমণ, কিছু কিছু খাবার, গন্ধ , ঘুম না হলে।
  • মাইগ্রেন ঘটার আগে ১০ % একটি ওরা বা একটি সূক্ষ্ম আবহ অনুভব করেন।

কারো কারো হয় ক্রনিক মাইগ্রেন

প্রতি মাসে অন্তত ১৫ দিন মাইগ্রেন আক্রমন হলে একে বলে ক্রনিক মাইগ্রেন। ১৪ মিলিয়ন লোকের আছে ক্রনিক মাইগ্রেন। এর সাথে হয় মন মেজাজে পরিবর্তন আর ঘুমের সমস্যা।

মাইগ্রেন হবার আগে একে ঠেকাবার কিছু উপায়

১। উচ্চ শব্দ আর উজ্জ্বল আলো পরিহার করুন, কনসার্ট, রোদের উজ্জ্বল আলো
২। খাবার পছন্দের দিকে নজর দিন কোন খাবার উস্কে দেয় মাইগ্রেন চকলেট, রেড ওয়াইন, কৃত্রিম মিষ্টক, চীনা খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার পনির
৩। হেডেক ডায়রি রাখুন
৪। হরমোন পরিবর্তনে নজর রাখুন ঋতুকালিন সময়
৫। আবহাওয়ার দিকে নজর রাখুন, উচ্চ হিউমিডিটি আর উচ্চ তাপ
৬। নিয়মিত আহার আর নিদ্রা বেলার খাবার বাদ দেয়া যাবে না
৭। স্ট্রেস মোকাবেলা
৮। নিয়মিত ব্যায়াম আর শিথিলায়ন, ধ্যান, ইয়গা।

 Further Reading
Atlas of Migraine and Other Headaches

Prof Dr Subhagata Choudhury

Ex Principal Chittagong Medical College
Ex Dean Medicine, Chittagong University
Ex Director, Lab Service, BIRDEM

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.