নেফ্রোটিক সিনড্রোম (Nephotic Syndrome)

নেফ্রোটিক সিনড্রোম হল এমন একটি অবস্থা যা কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ প্রয়োজনীয় প্রোটিন মূত্রের সাথে বের করে দেয়।

মানব দেহের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে কিডনি। সাধারণ ভাষায় কিডনিকে বলা হয়ে থাকে শরীরের ছাঁকনি, যা শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ মূত্র হিসেবে বের করে দিয়ে রক্তের পরিশোধন করে।

নেফ্রোটিক সিনড্রোম যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে, তবে এটি সাধারণত ২ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যেই বেশি দেখা দেয়।

প্রধান কারণসমূহ

কিডনিকে সরাসরি আক্রমণ করে এমন রোগের কারণে নেফ্রোটিক সিনড্রোম হতে পারে অথবা অন্য কোনো রোগের কারণে পরোক্ষভাবে নেফ্রোটিক সিনড্রোম হতে পারে। যেমন – ডায়াবেটিস, এইচআইভি ও হেপাটাইটিস সংক্রমণ এবং ক্যান্সার।

লক্ষণ এবং অন্যান্য জটিলতাসমূহ

• শরীরের ফোলাভাব – রক্তে অ্যালবুমিনের (এক ধরনের প্রোটিন যা শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি শোষণ করে রক্তে পাঠায় ) পরিমাণ কমে যাওয়ায় কোষের অভ্যন্তরে পানি জমে শরীরের ফোলা (Oedema) হয়। ফোলা সাধারণত প্রথমে চোখের চারপাশে, তারপর নীচের পায়ের চারপাশে এবং

শরীরের বাকি অংশ লক্ষ্য করা যায়।
• প্রস্রাবের পরিবর্তন – প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং প্রস্রাবে অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিন প্রবেশ করার ফলে প্রস্রাব ফেনা হয়ে যেতে পারে।
• ইনফেকশন – অ্যান্টিবডি হলো রক্তে প্রোটিনের একটি বিশেষ গ্রুপ, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন বের হয়ে যাওয়ার কারণে শরীরে অ্যান্টিবডি কমে যায় যা ইনফেকশনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
• রক্ত জমাট বাঁধা -রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে এমন প্রোটিন প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যাওয়ার ফলে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুকি বেড়ে যেতে পারে।

নেফ্রোটিক সিনড্রোম নির্ণয়ের পরীক্ষাসমূহ

• প্রস্রাব পরীক্ষাঃ প্রস্রাবে অধিক পরিমাণ প্রোটিনের উপস্থিতি নেফ্রোটিক সিনড্রোমের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক।
• রক্ত পরীক্ষা : রক্তে অ্যালবুমিনের মাত্রা কমে যায় এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়।
• এছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিডনির বায়োপসি (Renal biopsy) করার প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসা

• স্টেরয়েড এর মাধ্যমেই এর মূল চিকিত্সা শুরু হয়, যা প্রস্রাবের সাথে অতিরিক্ত প্রোটিন বের হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
•ডাইউরেটিক্স, যা মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। ফলে শরীরের অতিরিক্ত পানি কমে ফোলাভাব দূর হয়।

• অ্যান্টিবায়োটিক, যা ইনফেকশন প্রতিরোধ করে।
• শরীরে অ্যালবুমিনের পরিমাণ খুব কমে গেলে অ্যালবুমিন ইনফিউশন প্রয়োজন হতে পারে।

নেফ্রোটিক সিনড্রোমে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন। এই সময়ে ওষুধের পাশাপাশি বেশ কিছু খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে

উপদেশ বা নির্দেশনা

• শরীরে ফোলা থাকলে পানি পানের পরিমাণ নির্দিষ্ট করতে হবে।
• খাবারে অতিরিক্ত লবন যোগ করা থেকে বিরত থাকবে হবে।
• আমিষযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে, যেমন ডিমের সাদা অংশ।
• চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
এছাড়া ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

প্রতিরোধ

নেফ্রোটিক সিনড্রোমের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিরোধ নেই। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং পরবর্তী উপদেশ মেনে চলতে হবে। যদিও শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে এটি বারবার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে সঠিক চিকিৎসা নিলে শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই নেফ্রোটিক সিনড্রোম ভালো হয় ।

Dr Anika Ibnat MBBS

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.