পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (Polycystic ovary syndrome, PCOS) বর্তমান সময়ে বহুল আলোচিত এবং উদ্বেগজনক একটি বিষয়। PCOS এর কথা কমবেশি অনেকেই জানেন কিংবা ভুক্তভোগী। আধুনিককালের আয়েশী জীবন আমাদের নারীদেরকে একটি দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। চলুন আজকে আমরা এই সমস্যা নিয়ে একটু জানব।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (Polycystic ovary syndrome, PCOS) কী
নারীদের ডিম্বাশয়ে সিস্টের সংখ্যা মাত্রারিক্ত বেড়ে গিয়ে যখন অন্যান্য শারীরিক অসুবিধা তৈরি করে তখন একে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বলে। যেসব নারীর BMI (>25 kg/m2) বেশি থাকে তাদের PCOS হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। শুধু তাই নয় অধুনা PCOS রোগীর জেনেটিক লিংকআপের বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত গবেষকগণ। অতিরিক্ত ওজন এবং স্ট্রেসফুল জীবনযাপনই প্রধান কারণ বলা হয়।
লক্ষণ-উপসর্গ
৩ টা প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন হয় PCOS ডায়াগনোসিস করার জন্য।
১) অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়া/ পিরিয়ড না হওয়া
২) নারী শরীরে পুরুষ হরমোনের আধিপত্য
৩) ডিম্বাশয়ে মাত্রারিক্ত সিস্ট বেড়ে যাওয়া। এদের মধ্যে ২ নং পয়েন্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু তাই নয় PCOS রোগীের নিম্নোল্লিখিত সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়
- বন্ধ্যাত্
- মুখে ব্রণ হওয়া
- স্থুলতা
- শরীরে পুরুষের ন্যায় অতিরিক্ত লোম হওয়া
- ঘাড়ে,বগলে, উরুদেশের চামড়া মোটা হয়ে কালো হয়ে যাওয়া ইত্যাদি
রোগী এই ধরনের সমস্যায় ভুগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা
তবে আধুনিক চিকিৎসাব্যাবস্থায় সহজেই এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।

- Transvaginal sonography পরীক্ষা করে ওভারিতে কি পরিমাণ সিস্ট আছে তা সহজে দেখা যায়।
- রোগীর প্রজননকালীন হরমোনগুলোও সব পরীক্ষা করতে হবে সঠিক ডায়াগনোসিস করার জন্য।
অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি
- PCOS রোগীর উল্লিখিত সমস্যা ছাড়াও অনেক দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে যার মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। অনেকের একইসাথে থাকতে পারে রোগদুটা।
- তাছাড়া PCOS রোগীর ভবিষ্যৎ এ হার্টের সমস্যা, ডিসলিপিডেমিয়া, ওভারিয়ান ও এন্ড্রোমেট্রিয়াল ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
- সাম্প্রতিকালে PCOS-এর কারণে বন্ধ্যাত্ব (infertility) বেড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। যা একজন নারীকে শারীরিকভাবে অসুস্থতার মানসিকভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে। তবে আশার কথা আধুনিক চিকিৎসা ব্যাবস্থায় এসবের প্রতিকার সম্ভব হচ্ছে অনেকটাই।
কীভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়?
- পলিসিস্টিক রোগীদের চিকিৎসার অন্যতম ধাপ হল ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার প্রাধান্য দেয়া।
- PCOS রোগীর হরমোনাল লেভেলগুলো নরমাল রাখাই চিকিৎসা প্রাথমিক লক্ষ্য।
- তাছাড়া সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
- ওষুধ সেবনে রোগীর কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না এলে প্রয়োজনে সার্জারির অপশন ( Laparoscopic ovarian drilling)-এও যাওয়া যেতে পারে।
মোটকথা PCOS রোগীর সংখ্যা দিনকে দিন উদ্ধেগজনকভাবে যেভাবে বাড়ছে ঠিক তেমনি এর চিকিৎসার নিত্য নতুন উপায়ও বের হচ্ছে। তবে আমাদের আধুনিক নারীসমাজ সঠিক এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হলে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে।