অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য, এই কিছুকাল আগেও: আমাদের ঘুমের প্রয়োজন কেন এর ঠিকঠাক ও পরিপূর্ণ উত্তর ডাক্তার ও বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল না। জীবনের অন্য তিনটি মৌলিক চাহিদা–খাওয়া, পান করা, বংশবৃদ্ধি করা– সম্পর্কে আমাদের জানাশোনা বিবেচনা করলে দেখা যাবে এসবের প্রয়োজনীয়তার কথা আমরা জানি বহুকাল ধরে (শত শত বছর না হলেও অন্তত কয়েক দশক হলেও হবে)। কিন্তু চতুর্থ মৌলিক জৈবিক চাহিদা, ঘুমের চাহিদা, যা প্রাণিজগতের সবার ক্ষেত্রে সাধারণ একটি বিষয়, বিজ্ঞানকে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছে হাজার বছর ধরে।
বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে ‘ঘুম কেন প্রয়োজন’ প্রশ্নটি শুধু রহস্যের জন্ম দেয়। সবচেয়ে অনুকূল পরিবেশে চিন্তা করে দেখলেও, ঘুমকে ‘সবচেয়ে বোকা’ জৈবিক ঘটনা বলে মনে হবে।
ঘুমন্ত অবস্থায় আপনি কোন খাবার সংগ্রহ করতে পারবেন না। অন্য দশজনের সাথে মিশতে পারবেন না। কোন সঙ্গীর সাথে মিশে বংশবৃদ্ধিও করতে পারবেন না। সন্তানসন্ততির দেখভাল ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন না। সবচেয়ে খারাপ হলো, ঘুমন্ত অবস্থায় আক্রমণের শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ঘুম নিশ্চিতভাবে মানব আচরণের মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময়।
উল্লিখিত যেকোন এক বা একাধিক পরিস্থিতিতে বিবর্তন চাইবে যেকোন উপায়ে ঘুম বা ঘুমের কাছাকাছি কোন কিছু যেন না ঘটে। যেমন বলছিলেন একজন ঘুম বিজ্ঞানী, “ঘুমের যদি নিশ্চিত জীবন রক্ষাকারী ভূমিকা না থাকে তাহলে তা হবে বিবর্তন প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় ভুল।”
এতকিছুর পরও ঘুম ছিল ও আছে বীরবিক্রমে। প্রকৃতপক্ষে এখন পর্যন্ত গবেষণা করা হয়েছে এমন সব প্রজাতিই কমবেশি ঘুমায়। সাধারণ এ তথ্য থেকে বুঝা যায় যে আমাদের গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের সাথে সাথে বা প্রায় একই সময়ে ঘুমেরও বিবর্তন হয়েছে। এছাড়া বিবর্তনের আদ্যোপান্ত ঘুমের অস্তিত্ব এও প্রমাণ করে যে, ঘুমের কারণে জীবের অস্তিত্ব সংকটে পড়ার যে শংকা, এরচেয়ে ঘুমানোটা তার জন্য বেশি উপকারী।
ম্যাথিউ ওয়াকারের হোয়াই উই স্লিপ থেকে রূপান্তরিত
লেখা: ওমর ফারুক
সম্পাদনা: পুনম পালিত