খেয়াল করেছেন হয়তো। ক্লান্ত -শ্রান্ত হলে আমাদের ক্ষুধা লাগে বেশি। এটি কাকতালীয় কোন ব্যাপার নয়। আমাদের শরীরে আছে এক ধরনের হরমোন যার ফলে আমাদের ক্ষুধা লাগে। ঘুম কম হলে এ হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে আমাদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্ষুধা লাগে।
অন্যদিকে, খাওয়াদাওয়া পর্যাপ্ত হলো কি না, তৃপ্তির ব্যাপারেও ব্রেইন অবগত হয় আরেক হরমোনের মাধ্যমে। ঘুম কম হলে এ হরমোনের মাত্রা যায় কমে। খাবার পর্যাপ্ত হলেও দেখা যায় এ হরমোনের ঘাটতির কারণে আমরা আরো বেশি খাই।
পূর্ণবয়স্ক ও শিশুদের বেলায় ওজন বাড়ার জন্য নিদ্রাহীনতার ভূমিকা এখন প্রমাণিত সত্য। আরো কষ্টকর ব্যাপার হলো, আপনি ডায়েট করার চেষ্টা করছেন কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছেন না তাহলেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাবেন না।
নিদ্রাহীনতার স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে সহজেই অনুমেয় যে ঘুম যত কম হবে আয়ুও হবে তত কম। দুঃখজনক হলো, কম ঘুমানোর পক্ষে প্রাচীন অনেক প্রবাদ আছে, তখন ঘুম নিয়ে এত আধুনিক গবেষণা হয়নি বলে এর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়নি। ঘুম কম যাওয়ার জন্য অনেকে মোটিভেশন দিয়ে থাকেন, “I’ll sleep when I’m dead”। এ ধরনের চিন্তাভাবনা মানে যমদূতকে নিমন্ত্রণ জানানো। অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে জীবনমান খারাপ হতে বাধ্য, থাকে মৃত্যুর আশংকা। তন্দ্রাভাব না আসা পর্যন্ত আমরা না ঘুমিয়ে থাকতে পারি। দুঃখজনক হলো মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা যৌক্তিক কারণ ছাড়া স্বেচ্ছায় ঘুম থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে।
কম ঘুমানোর কারণে আমরা সব দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এমনকি আর্থিকভাবেও এই ঘুমের ঘাটতি মারাত্নক প্রভাব ফেলছে। প্রভাব এতটাই মারাত্মক যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শিল্পোন্নত দেশগুলোতে চলছে নিদ্রাহীনতার মহামারী।
গত শতাব্দী জুড়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিম ইউরোপীয় কিছু দেশে ঘুমের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমেছে। এটা কাকতালীয় নয় যে এসব অঞ্চলে উল্লিখিত বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যাও বেড়েছে সমান তালে।
বিজ্ঞানীরাও, যেমন আমি ম্যাথিউ ওয়াকারও, ডাক্তারদের উদ্বুদ্ধ করছি প্রেস্ক্রিপশনে ঘুমের চিকিৎসা দেয়ার জন্য। এ চিকিৎসা ব্যথাহীন এবং নেয়া সহজ বলে সবাই খুশিমনে গ্রহণও করছে। ঘুমের ওষুদের আছে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তাই কখনো ডাক্তারের কাছে বেশি বেশি এসব ওষুধ লেখার জন্য পীড়াপীড়ি করার মত ভুল করবেন না।
ম্যাথিউ ওয়াকারের হোয়াই উই স্লিপ থেকে রূপান্তরিত
লেখা: ওমর ফারুক
সম্পাদনা: পুনম পালিত