ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট (Ventricular Septal Defect)

ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট (Ventricular Septal Defect)

আমাদের হার্টে আছে চারটি চেম্বার বা প্রকোষ্ঠ। উপরের দুইটিকে বলে এট্রিয়াম, নিচের দুইটিকে বলে ভেন্ট্রিকল (ডান ও বাম ভেন্ট্রিকল)। দুই ভেন্ট্রিকল আলাদা থাকে পর্দা বা সেপ্টা দিয়ে। কোন কারণে এ পর্দায় ত্রুটি বা ছিদ্র হলে একে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট (Ventricular Septal Defect, ভেন্ট্রিকলের পর্দায় ত্রুটি, ছিদ্র)।

দুই ভেন্ট্রিকলের মধ্যে গঠন ও কাজে কিছু তফাৎ আছে

ডান ভেন্ট্রিকলের কাজ ফুসফুসে রক্ত পাঠানো। অন্যদিকে বাম ভেন্ট্রিকলকে সারা শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত সরবরাহ করতে হয় বলে এর অভ্যন্তরীণ চাপ হয় বেশি। তাই ভেন্ট্রিকলের পর্দায় কোথায় ছিদ্র থাকলে রক্ত বেশি চাপের জায়গা থেকে কম চাপের জায়গায় চলে যায়। অর্থাৎ ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট থাকলে রক্ত ছিদ্রপথে বাম থেকে ডান ভেন্ট্রিকলে চলে যায়।

এতে কী সমস্যা হয়?

আমরা জানি বাম ভেন্ট্রিকলে থাকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ বিশুদ্ধ রক্ত, আর ডান ভেন্ট্রিকলে থাকলে কার্বন ডাই অক্সাইড সমৃদ্ধ দূষিত রক্ত। ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট থাকলে প্রথম সমস্যা হয় দুই ভেন্ট্রিকলের রক্ত মিশে যায়। এমন মিশ্রিত রক্ত সারা শরীরে পৌঁছলেও কম অক্সিজেন যুক্ত হওয়ার কারণে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়।

দ্বিতীয় সমস্যা হলো, ডান ভেন্ট্রিকলের চাপ বেড়ে যায়। ডান ভেন্ট্রিকলের সাথে সরাসরি সংযোগ থাকে ফুসফুসের, সেখানেও চাপ বেড়ে যায়। ডাক্তারি ভাষায় একে বলে পালমোনারি হাইপারটেনশন (Pulmonary Hypertension, ফুসফুসের ল্যাটিন প্রতিশব্দ pulmo, আর চাপ বেড়ে যাওয়াকে বলে Hypertension)।

Pulmonary Hypertension

ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্টের শুরু গর্ভাবস্থায়। হার্টের যত ধরনের জন্মগত ত্রুটি আছে এর মধ্যে ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্টের হার সবচেয়ে বেশি। ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্টের প্রায় অর্ধেক রোগী (২০-৪৫%) বয়স দুই বছরের মধ্যে কোন মেডিসিন বা অপারেশন ছাড়া নিজ থেকেই সেরে ওঠে। অনেকের প্রয়োজন হয় মেডিসিন ও সার্জারির।

কী কারণে হয় ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট?

সঠিক কারণ অজানা।

ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্টের লক্ষণ উপসর্গ

ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট আকারে ক্ষুদ্র হলে কোন উপসর্গ নাও থাকতে পারে। উপসর্গ না থাকলে সাধারণত এ রোগ ধরা পড়ে না, অথবা অন্য কোন কারণে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে বা পরীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়ে (এক্সিডেন্টাল ডায়াগনোসিস)।

ছিদ্র ক্ষুদ্র, মাঝারি বা বড় হলে থাকে এক বা একাধিক উপসর্গ। রোগীরা দুর্বলতা অনুভব করেন। শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা নিয়ে আসেন কেউ। হতে পারে অনিয়মিত হৃদ স্পন্দন (হার্টবিট)। ঠোঁট ও আঙ্গুলের ডগা নীল বর্ণ ধারণ করতে পারে ত্বক।

cyanotic lips infant

কীভাবে ডাক্তার ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট ডায়াগনোসিস করেন?

রোগীর উপসর্গ ও শারীরিক পরীক্ষা করে ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট সন্দেহ হলে ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হবেন। ইসিজিতে (ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাফি) কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। বুকের এক্সরেতেও কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায় যেমন হার্ট আকারে বড় হতে পারে। হার্টের গঠন, ত্রুটি, পাম্প করার সক্ষমতা, রক্ত চলাচল ইত্যাদি দেখার জন্য করা হয় ইকোকার্ডিওগ্রাফি।

ECHOCARDIOGRAPHY IN CHILD

কীভাবে ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্টের চিকিৎসা করা হয়?

প্রথম কথা হলো চিকিৎসা প্রয়োজন কি না? ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট ক্ষুদ্র হলে বা ছিদ্র এমনিতে বন্ধ হয়ে গেলে সাধারণত কোন উপসর্গ থাকে না। এজন্য চিকিৎসাও প্রয়োজন পড়ে না। ডাক্তার সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন। ছিদ্র ক্ষুদ্র হলেও অনেক ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা যায়, রোগীর অবস্থা অবনতি হয়। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা প্রয়োজন।

ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্টের চিকিৎসা সাধারণত হার্ট স্পেশালিস্ট ( মেডিকেলের ভাষায় কার্ডিওলজিস্ট, সহজ ভাষায় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ) করে থাকেন। শিশুদের জন্য এ রোগের স্পেশালিস্ট হলেন পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট। অনেক ক্ষেত্রে শুধু ওষুধে এ রোগ সারে না, অপারেশনের মাধ্যমে তখন ছিদ্র বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হয়। এ ধরনের সার্জারি করেন কার্ডিয়াক সার্জন (কার্ডিওভাস্কুলার এন্ড থোরাসিক সার্জারি)।
সার্জারি ছাড়াও রোগের উপসর্গ কমাবার জন্য মেডিসিনের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন হার্ট ফেইলিউরের উপসর্গ থাকলে ওষুধ দেয়া হয় যাতে হার্ট ভালভাবে স্বাভাবিক কাজ করতে পারে।
অন্য কোন রোগ না থাকলে সাধারণত সার্জারির পর পূর্বের উপসর্গ থাকে না, সবাই স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবন যাপন করতে পারেন।

রোগীর জন্য নির্দেশনা

• নিয়মিত ওষুধ সেবন করবেন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী
• ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্টের উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন জরুরিভাবে

Dr Omar Faruq MBBS BCS (Health)

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.