আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আমাদের মা।আমাদের এতটুকু অসুস্থতায় মায়েরা অস্থির হয়ে উঠেন,কিন্তু মায়েদের কতটুক খোঁজ রাখি আমরা।
ভায়া টেস্ট কী?
ভায়া টেস্টের (VIA) পূর্ণরূপ হলো Visual Inspection with Acetic Acid। জরায়ুমুখের ক্যানসারের স্ক্রিনিং-এর জন্য এ টেস্ট করা হয়। এই টেস্টের মাধ্যমে জরায়ুর কোষে কোন লক্ষণীয় পরিবর্তন হয়েছে কিনা দেখা হয়।
ভায়া টেস্ট কেন করবেন?
জরায়ুমুখের ক্যানসার হতে দীর্ঘ সময় লাগে। শুরু থেকে প্রায় দশ বছর। শুরুতেই যদি ভায়া টেস্টের মাধ্যমে জরায়ুর পরিবর্তন শনাক্ত করা যায় তাহলে ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়।
বাংলাদেশের ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের শতকরা ৩০ ভাগই হচ্ছেন জরায়ু মুখের ক্যান্সারের শিকার। এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার (বা জরায়ুর ভিতরের আবরণের ক্যান্সার) দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ক্যান্সার, এবং উন্নত দেশগুলির নারীদের মধ্যে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আধিক্য বেশি হওয়ায় এটি বিশ্বব্যাপী এটি চতুর্থ স্থানে রয়েছে। উইকিপিডিয়া থেকে
ভায়া টেস্ট কাদের জন্য নির্দেশিত, কারা করবেন?
- সকল বিবাহিত নারী
- যাদের বয়স ৩০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে
- যাদের বয়স ৩০ বছর হয়নি কিন্তু ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন করার জন্য
- যাদের বয়স ৩০ বছর হয়নি কিন্তু ২, ৩ সন্তান আছে এবং সমস্যাও আছে
ভায়া টেস্ট কাদের জন্য নির্দেশিত নয়, কারা করবেন না?
- অবিবাহিত বা সদ্য বিবাহিত নারী
- বয়স যাদের ৩০ বছরের কম অথবা ৬০ বছরের বেশি
- বয়স ৩০ বছর কিন্তু সন্তান নেই কিন্তু চেষ্টা করছেন
- গর্ভবতী হলে
ভায়া টেস্ট করতে খরচ কেমন পড়ে?
দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে ফ্রি-তে ভায়া টেস্ট করতে পারবেন।
ভায়া টেস্ট করার জন্য কী লাগবে?
নিজের বা অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার
জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (NID)
ভায়া টেস্টের ফলাফল পর্যালোচনা
পজিটিভ এবং নেগেটিভ রেজাল্ট হতে পারে।
- নেগেটিভ রেজাল্ট মানে কোন পরিবর্তন পাওয়া যায়নি, কোন অসুবিধা/সমস্যা নেই।
- পজিটিভ মানে জরায়ুতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন সন্দেহ হচ্ছে বা লক্ষ্য করা গেছে।
টেস্টের ফলাফল একটি ‘রিপোর্ট কার্ডে’ দেয়া থাকে। ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নীল বা লাল রঙয়ের রিপোর্ট কার্ড দেয়া হয়ে থাকে।
নীল ও লাল রিপোর্ট কার্ড কেন দেয়া হয়?
পজিটিভ রিপোর্ট হলে লাল কার্ড এবং নেগেটিভ রিপোর্ট হলে নীল রঙের কার্ড দেয়া হয়।
লাল রঙের কার্ড মানেই কি ক্যানসার?
লাল রঙের কার্ড মানেই ক্যানসার হয়েছে এমন নয়। লাল রঙয়ের কার্ড দেয়া দেয়া রোগীর ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্যানসারের ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য এবং ক্যানসার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বা চিকিৎসার জন্য। লাল কার্ড পেলে কোন অবহেলা নয়, ডাক্তারের পরমার্শ অনুযায়ী জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসা বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
একবার টেস্ট করাই কি যথেষ্ট?
প্রতি ৩ বছর পরপর ভায়া টেস্ট করে দেখতে হয় জরায়ুতে কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা। তাই একবার টেস্ট করাই যথেষ্ট নয়। এর মধ্যে কোন লক্ষণ দেখা গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ৩ বছরের আগেই করতে হতে পারে।
আমাদের একটু সচেতনতাই পারে মায়েদের এই ভয়াল ক্যান্সারের মৃত্যু হতে রক্ষা করতে। আজই আপনার মা, বোন ও স্ত্রীকে নিকটস্থ হাসপাতালে ভায়া টেস্ট করাতে নিয়ে যেতে পারেন। কারণ মায়েরা সন্তানের ব্যাপারে যতটা সচেতন,নিজেদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ততটাই উদাসীন। শুরুতে এই রোগ নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব।