ফেব্রুয়ারির কোন এক সকালে মেডিসিন আউটডোরে রোগী দেখছি। বয়স পঁচিশ হবে। একজন নারী এলেন, সবুজ রংয়ের বোরকা পরা। মোবাইলে একটা ছবি দেখালেন।
এটার জন্য কি ওষুধ আছে?
তখন তার বয়স বছর দেড়েক। কেরোসিনের প্রদীপ থেকে কাপড়ে আগুন ধরে পুড়ে যায় নাভির পাশ থেকে পেটের ডানদিকের অধিকাংশ। বাবা হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছিলেন। বাসায় তিনিই নিয়মিত ড্রেসিং করতেন। স্কিন একবার হিলড (healed) হয়ে স্কার টিসু জমা হলে স্থায়ী হয়ে যায়। বর্তমানের মত চিকিৎসা অত আধুনিক ছিল না। এখন থাকলেও সাধ্য নেই। এখন কোন ইনফেকশনও নেই। নতুন করে তাই ওষুধের প্রয়োজনও নেই।
স্যার, আমার কি বাচ্চা নিতে অসুবিধা হবে?
না, তা হবে কেন?
হয়েছি কি, ওর বিয়ে হয়েছিল। বছর খানেক আগে। স্বামী চলে গেছে বিদেশ। বিদেশ যাওয়ার টাকা যৌতুক হিসেবে নিয়েছিল, কন্যাপক্ষও এমন পোড়া মেয়ের বিয়ে দিতে কষ্ট হবে ভেবে রাজি হয়ে যান। মেয়ের ভাষ্যমতে, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন এখন বলছে মেয়ের বাচ্চাকাচ্চা হবে না। পেটের এ অবস্থায় সন্তান ধারণ করলে পেট ছিঁড়ে যাবে। আসলে শরীরের গঠন ও নানান অংশের কাজ নিয়ে আমাদের শিক্ষিত সমাজেই সাধারণ ধারণা নেই।
স্যার, কাল আম্মাকে নিয়ে আসব। আপনি বুঝিয়ে বলবেন বিষয়টা।
অবশ্যই। দশটার আগে করে চলে আসবেন তাহলে সময় করে বুঝিয়ে বলতে পারব, তখন রোগীদের ভীড় থাকে না।
সেদিন নানান ব্যস্ততার মাঝেও ঘটনাটি বারবার মনে পড়তে লাগল। কাল তার মাকে কী বলে কাউন্সেলিং করব। পরিস্থিতিটা নতুন। দুরূহ, বিরল রোগ হলেও বোঝানো যায়। এক্ষেত্রে আমরা প্রফেশনাল কিন্ত চিকিৎসা শুধু ওষুধ লেখা, সার্জারি করা নয়। এর সামাজিক দিকও আছে। রাতে ঘুমানোর আগে, পরদিন সকালে মনের মধ্যে ছিল বিষয়টা। ডিউটিতে যাওয়ার একটা ক্লান্তি আছে। সেদিন আউটডোরে রোগী দেখতে যাওয়ার কোন ক্লান্তি নয় বরং আগ্রহ ছিল।
আউটডোরে গিয়ে দেখলাম কেউ আসেনি। আমার মনটা মরে গেল। নতুন রোগী দেখতে লাগলাম। ধীরেধীরে ভীড় বাড়তে লাগল। দুপুরবেলা দেখলাম মা ও মেয়ে দরজার সামনে অপেক্ষা করছেন।
আসেন, আসেন।